শুভ জন্মদিন ঢাকার কবি

'জন্মেছি ঢাকায় আমি ছায়াচ্ছন্ন গলির ভেতরে/ভোরবেলা নিম্নমধ্যবিত্ত মাতামহের নিবাসে'- কবি শামসুর রাহমান নিজের জন্মদিনকে এভাবেই অবলোকন করেছিলেন কবিতায়। তার জন্মদিনের অনুভূতির সঙ্গে মিলেছিল জন্মভূমি নগর ঢাকা, জন্মভূমি বাংলাদেশ। যা সময়ের স্রোতে আরও পল্লবিত হয়েছে। প্রগাঢ় হয়েছে। বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্ত চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা ও নাগরিকতার অগ্রদূত এই কবির ৯১তম জন্মদিন আজ বুধবার। ১৯২৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার মাহুতটুলীতে জন্ম নেন তিনি।

কবি শামসুর রাহমানের বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী, মা আমেনা বেগম। তার পড়াশোনা শুরু হয় রাজধানীর পোগোজ স্কুলে। ৪০০ বছরের পুরোনো নগর ঢাকায় বেড়ে ওঠেন তিনি। এখানেই কেটেছে তার সারাজীবন। শৈশবেই কবিতায় হাতেখড়ি হয় তার। ১৯৫৭ সালে শামসুর রাহমান সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন ইংরেজি দৈনিক মর্নিং নিউজের সহ-সম্পাদক হিসেবে। পরে পুরো এক দশক তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

শামসুর রাহমানের কবিতার বিষয়বস্তু প্রেম, মানবিকতা, স্বাধীনতা ও মানুষের বিকাশের পক্ষে; প্রতিক্রিয়াশীলতা, ধর্মান্ধতা ও অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে যুক্ত ছিলেন তিনি তার কলম ও কাব্যশক্তি নিয়ে। এমনকি কখনও কখনও রাজপথেও নেমেছেন লেখক-সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে। আসাদের শহীদানের পর যেমন, তেমনি নূর হোসেনের মৃত্যুর পরও তার কলম থেকে বেরিয়ে এসেছে ধারালো কবিতা। তিনি লিখেছেন, 'আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা'। নূর হোসেনকে নিয়ে লিখেছেন, 'বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়'। এভাবে শামসুর রাহমান মূলত বাংলাদেশ ও গণতন্ত্রের সমান বয়সী এক কবির আসনে আসীন। তার কবিতা ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যক্তিক, একই সঙ্গে গীতিময় ও মহাকাব্যিক। বাংলা কবিতায় আধুনিকতা, ব্যক্তির নিঃসঙ্গ, বিবমিষা ও আনন্দলহরীর অনিন্দ্য এক রূপকার শামসুর রাহমান।

'নিজ বাসভূমে', 'বন্দী শিবির থেকে', 'দুঃসময়ে মুখোমুখি', 'ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা', 'বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে', 'ইকারুসের আকাশ', 'উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ', 'যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে', 'অস্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই', 'দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে', 'বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়', 'ভস্মস্তূপে গোলাপের হাসি' প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থের শিরোনামই বলে দেয় শামসুর রাহমানের কবিতা স্বদেশ চিন্তার অন্যতম দলিল।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য শামসুর রাহমান স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, আদমজী পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জীবনানন্দ পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তিনি জাপানের মিৎসুবিশি পুরস্কার পান। ১৯৯৪ সালে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা তাকে আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত করে। ওই বছর তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধি দেয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯৬ সালে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধি দেয় কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৬ সালের ১৮ আগস্ট তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

কবি শামসুর রাহমানের ৯১তম জন্মদিন উপলক্ষে আজ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বনানী কবরস্থানে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, গান ও কবিতা আবৃত্তি।


সর্বশেষ সংবাদ