রেকর্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছেড়ে বিসিএসে যোগদান, কর্মকর্তারা দুষছেন গভর্নরকে    

  © সংগৃহীত

আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সুযোগ সুবিধা দীর্ঘদিন বাড়েনি। শুধু তাই নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে আগের তুলনায়ও কমেছে। এতে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। বিরক্ত হয়ে অনেকেই ছাড়ছেন চাকুরি। আবার স্বায়ত্তশাসনের ঘাটতি ও কাজের স্বাধীনতায় বারবার হস্তক্ষেপ হওয়ায় শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া কর্মীরাও আর ফিরছে না। ক্ষোভ ও অসন্তোষ নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল’। নানামুখী চাপ ও সুযোগ-সুবিধা কমানোসহ কর্মপরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার প্রেক্ষাটে করণীয় নির্ধারণে বৈঠক ডেকেছে সংগঠনটি।

সোমবার (২৭ মে) বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ভবনস্থ জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জন্য অন্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় উচ্চতর বেতন কাঠামো থাকলেও উল্টো সুযোগ-সুবিধা কমানো হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে যোগদানের পর ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে এপেক্স রেগুলেটরি বডি’ করার ঘোষণার সঙ্গে যা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এনিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।

সভায় আলোচনার বিষয় উল্লেখ করে অফিসার্স কাউন্সিলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে সব সদস্যের কাছে এক পৃষ্ঠার একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। সেখানে সরকারি বিভিন্ন বিভাগ, প্রতিষ্ঠান বা বাহিনীর পদোন্নতিসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়ালেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কমানোর সুনির্দষ্ট তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এক সময় বিসিএস, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মতো চাকরি ছেড়ে অনেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসতেন। কিন্তু এখন হয়েছে উল্টো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনের ঘাটতিতে হতাশা, চাকরির সুযোগ-সুবিধা কমে আসার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

এতে বলা হয়েছে, বর্তমান গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকে এপেক্স রেগুলটরি বডি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা তার অন্যতম ভিশন হিসেবে ঘোষণা করেন।

সম্প্রতি ইতোপূর্বে পেয়ে আসা শ্রান্তিবিনোদন ভাতা কর্তন করা হয়েছে। ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ের রেজাল্টের ভিত্তিতে অতিরিক্ত যে ইনক্রিমেন্ট দেয়া হতো, ট্রেনিং একাডেমির কর্মকর্তাদের ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে দেয়া ভাতা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ের কর্মকর্তাদের বিদেশে বিশেষ প্রশিক্ষণ, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগের সময় একাডেমিক রেজাল্টের ভিত্তিতে যে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট দেয়া হতো তা বাতিল করা হয়েছে।

তথ্য বলছে, গত এপ্রিলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ (বিসিএস) অন্য চাকরিতে যোগ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫৭ জন কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে দেন। পদত্যাগকারীদের মধ্যে রয়েছেন একজন উপপরিচালক ও একজন অফিসার। বাকি ৫৫ জন সহকারী পরিচালক।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আগে বিসিএস চাকরি ছেড়ে দিয়ে অনেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসত। আমি নিজেও বিসিএস ছেড়ে এসেছি। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়ছে। এটা হতাশার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন ও কাজের স্বাধীনতা কমে যাওয়ায় অনেকেই হাতাশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, চাকরির আয় দিয়ে তাদের জীবনযাপন করতে হয়। বর্তমান মূল্যস্ফীতির এ সময়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেবে কি উল্টো বাতিল করছে। এতে করে কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরণের হতাশা কাজ করছে। সুবিধা কমে যাওয়ায় অনেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

 

সর্বশেষ সংবাদ