অধ্যাপক ছাড়াই চলছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় বিভাগ

গণ বিশ্ববিদ্যালয়
গণ বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

অধ্যাপক ছাড়াই চলছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ছয়টি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম। এছাড়া বেশিরভাগ বিভাগসমূহ চলছে মাত্র একজন করে অধ্যাপক দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি (বিএমবি), ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান ও সামাজকর্ম, আইন, মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ফলিত গণিত বিভাগে কোনো পূর্ণকালীন অধ্যাপক নেই। তবে ইংরেজি বিভাগে একজন খন্ডকালীন অধ্যাপক আছেন। এছাড়া আইন বিভাগে শিক্ষক তালিকায় অধ্যাপক আতাউর রহমানের নাম থাকলেও তিনি মূলত রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান। আইন বিভাগে তিনি নন-ডিপার্টমেন্টাল কিছু কোর্সের ক্লাস নিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে সাপোর্টিং কিছু কোর্স যেমন নীতিবোধ ও সমতা, পরিসংখ্যান, অর্থনীতি, পরিবেশ বিজ্ঞান ইত্যাদি পড়ানো হয়। তবে এসব সাপোর্টিং বিভাগেও নেই কোনো অধ্যাপক। 

ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সাতটি বিভাগে রয়েছে মাত্র একজন করে পূর্ণকালীন অধ্যাপক। বিভাগসমূহ হলো মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মেসী, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস, বাংলা, রাজনীতি ও প্রশাসন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) এবং ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই)।

আরও পড়ুন: ইউল্যাবে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়বেন দীঘি

এর মাঝে ইইই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বেও রয়েছেন। শুধু রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে দুজন অধ্যাপক আছে, যার একজন (অধ্যাপক নীলয় কুমার দে) মূলত ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যান।

এভাবে অধ্যাপক ছাড়া 'জোড়াতালি' দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে তারা পড়েছেন বিপাকে। অনেক বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান ছাড়াই শিক্ষাজীবনের শেষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের কেউই নাম প্রকাশে রাজি হননি।

এক শিক্ষার্থী জানান, বিভাগে অধ্যাপক শূন্যতা থাকার ফলে ভবিষ্যতে আমাদের পড়াশোনার মান প্রশ্নবিদ্ধ হবে। একটি বিভাগের গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়সহ আরো অনেক কিছুই অধ্যাপকরা পরিচালনা করেন। সেক্ষেত্রে পূর্ণকালীন অধ্যাপক না থাকায় আমরা সঠিকভাবে শিখতে পারছি না।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, অধ্যাপকেরা তাঁদের দীর্ঘদিনের শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মানকে দ্রুত ত্বরান্বিত করতে পারেন। তাদের রেফারেন্স বা দিকনির্দেশনা উচ্চশিক্ষার পথকে সহজ করে দিতে পারতো। অধ্যাপক না থাকায় আমরা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষাবিদের সাথে কথা হয়। তাদের অভিমত, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অধ্যাপক ছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় পাঠ সম্পন্ন হবেনা। ফলে এই শিক্ষা থেকে সার্টিফিকেট অর্জন হলেও 'শেখা' কম হবে। তাদের দক্ষতা পরিপূর্ণ হবে না, যা তাদের পরবর্তী জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চললে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে শিক্ষার্থীরা বিশ্বের তুলনায় পিছিয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে ইউজিসির নীতিমালা সম্পর্কে জানতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক মো: ওমর ফারুখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে পরে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সংকটটি জানা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, 'যেসব বিভাগে আমাদের অধ্যাপকের প্রয়োজন, ইতিমধ্যে তা আমরা জাফরুল্লাহ স্যারকে জানিয়েছি। ব্যাপারটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।'


সর্বশেষ সংবাদ