‘উপাচার্য যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই আমার কাছে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত’
নিজ বিভাগে ফেরত ইস্যুতে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেছেন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. রাহমান চৌধুরী।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে এক খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, গণ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই আমার কাছে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
দীর্ঘ ৪ পৃষ্ঠার ঐ খোলা চিঠিতে তিনি কিভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি পেয়েছেন, এ বিষয়ে তিনি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার সাথে কি হয়েছে এবং পরবর্তীতে তিনি কি করতে চান, তার ইস্যুতে ছাত্র ও সাংবাদিকদের বেশকিছু ঘনটাবলীর মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন চিন্তাধারা প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষককে ফেরাতে স্মারকলিপি, স্বাক্ষর তুলে নিতে ‘চাপ’
শিক্ষার্থীদের নিজ বিভাগে ফেরত চাওয়ার বিষয়টি চিঠির একটি অংশে তুলে ধরে তিনি বলেন , ‘বহু ছাত্র একসঙ্গে স্বাক্ষর দিয়ে উপাচার্যের দারস্থ হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের এসব কিছুর সঙ্গে যদিও জড়াতে চাই না, তবুও শিক্ষার্থীরা যে এমন একটা কাজ করেছেন সেটা জেনে আনন্দ লাগছে। নিজে তো আমি ফিরতে চাই-ই শিক্ষার্থীরা যখন চাইছে তখন না ফিরবার তো আর কারণ থাকতে পারে না। সঙ্গে সঙ্গে আমি এ কথাও বলি, নতুন উপাচার্য মহোদয়ের সাথে আমার কথা হয়েছে, তিনিই খুবই নিয়মতান্ত্রিক এবং যুক্তিসঙ্গত মানুষ। তার সঙ্গে কথা বলে আমার খুব ভালো লেগেছে। তিনি সবকিছু বিবেচনা করে এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই আমি মেনে নিব।’
তিনি আরো বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা যে কাজটি করেছেন এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ছাত্রদের এমন আবেদন জানাবার নিশ্চয়ই অধিকার আছে। সম্মানিত সকল ট্রাস্টি এবং উপাচার্য মহোদয় এ ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেন, সেটার জন্যই এখন আমার অপেক্ষা করতে হবে। মনে প্রাণে আমি বিশ্বাস করি, বর্তমান উপচার্য মহোদয় সবদিক বিবেচনা করে যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মঙ্গলজনক, তিনি আপাতত সেটাই করবেন।
আরও পড়ুন: বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে গবিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন
চিঠির আরেকটি অংশে তাকে অব্যহতি দেওয়ার বিষরটি তুলে ধরে বলেন, সন্দেহ নেই রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগ থেকে আমাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে তখন আমি উচ্চবাচ্য করিনি। নিয়মতান্ত্রিকভাবে বর্তমান উপাচার্যের ক্ষমতা গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই আমি বিষয়টি নিয়ে একাই লড়তে চেয়েছিলাম। কাউকে আমার লড়াইয়ের সঙ্গী করতে চাইনি। রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের কোনো শিক্ষককে আমি আমার এ লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত হবার জন্য বলিনি, শিক্ষার্থীদেরকেও নয়। বরং বিভাগের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পর আমি বিভাগের কোনো শিক্ষকের কক্ষে আর যাইনি, নিজে থেকে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলিনি। কারণ আমি শুনেছি,বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলার জন্য কিংবা আমার কক্ষে আসার জন্য নাকি পূর্বের প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের ক্রোধের শিকার হয়েছিলেন। কখনো আমি চাইনি, রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের কোনো শিক্ষক এ ধরনের ক্রোধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হোক। ফলে পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে আমার দেখা সাক্ষাৎ বা কথাবার্তা বলার ইচ্ছে হলেও, সচেতনভাবে তা আমি এড়িয়ে গেছি। যদি কোনো শিক্ষক এগিয়ে এসে আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন, শুধুমাত্র তখনই তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। সেই সুযোগও ছিলো খুব কম।
আরও পড়ুন: জন্ম নিয়ে কটূক্তি করায় ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টা, তদন্ত কমিটি গঠন
তিনি আরো বলেন, ইতিপূর্বে আমার বিরুদ্ধে যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে সেখানে আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। প্রশাসন এখনো আমাকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের অনুলিপি দেয়নি। কিন্তু, তদন্ত কমিটির সভাপতি সম্মানিত ট্রাস্টি অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীর সঙ্গে এ ব্যাপারে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন তদন্ত কমিটি দেখতে পেয়েছে আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলি সত্য নয়। সবকিছুর পর উপাচার্য মহোদয় যে সিদ্ধান্ত দিবেন, সেটা মনে নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত। শিক্ষার্থীদের বলবো আপনারাও খুঁশি মনে সেটা মেনে নিবেন। তার পূর্বে যে যাই বলুক দয়া করে মাথা গরম করবেন না।
চিঠির শেষ অংশে তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রধানত পড়াতে আসেন শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা আপনারা যদি আমার পড়ানো এবং আচরণে খুঁশি থাকেন, তাহলে তার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় আর কোন প্রাপ্তি আমার নেই। জ্ঞান চর্চার ব্যাপারে আপনাদের সকলের জন্য আমার দরজা সর্বদাই খোলা। সবাই ভালো থাকবেন।