০২ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:৪৩

লাল তালিকায় আসছে উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ— এ তিন পদে নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষ রয়েছে, নেই ৬৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ উপ-উপাচার্য নেই ৮৫টিতে। 

আরও পড়ুন: ভিসি-ট্রেজারার নেই ৬৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ৮৫টিতে নেই প্রো-ভিসি

যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ মাসের অধিক সময়ের জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ থাকবে না সেগুলো লাল তালিকাভুক্তি করা উদ্যোগ নেয় ইউজিসি। গত সেপ্টেম্বরে নেওয়া এই উদ্যোগের ৪ মাস পরও এখনও পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। ফলে এটি উদ্যোগেই সীমাবদ্ধ ছিল। 

আরও পড়ুন: কার্যক্রম চললেও লাল তারকা চিহ্ন নেই ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে

জানতে চাইলে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয় মাসের অধিক সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও আচার্য কর্তৃক নিযুক্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ প্যানেল না পাঠালে ইউজিসির ওয়েবসাইটে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে রেড স্টার মার্ক দেওয়া হবে। সম্প্রতি এ বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি বৈঠকে করে তারপর কার্যকর করা হবে।

আরও পড়ুন: ৬ কারণে লাল তালিকায় পড়বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

তথ্যমতে, অনুমোদন নেই এমন প্রোগ্রাম রাখাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আছে- এ রকম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ (আপডেট) করে বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসি। বছরের বিভিন্ন সময় এই হালনাগাত করে ইউজিসি। সর্বশেষ করেছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক বা জনসাধারণের সচেতনতার্থে ইউজিসির ওয়েবসাইটে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে লাল তারকা চিহ্ন প্রদান করা হয়।

এদিকে, ২০২১ সালের উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে চলতি মাসের শেষে দিকে এটি আবার হালনাগাত করা হবে। সেখানে উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থাকবে বলে জানান অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষের প্যানেল পাঠানো তাগদা বারবার আর দিবো না। এখন থেকে প্যানেল পাঠানো না হলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তার জবাব সন্তোষজনক না হলে ব্যবস্থা নেবো। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে রেড স্টার মার্ক দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে লাল তালিকায় আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হবে বলে তিনি মনে করে।

ইউজিসির ওয়েবসাইটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় গিয়ে দেখা যায় মোট ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে লাল তারকা চিহ্ন রয়েছে। সর্বশেষ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নামের পাশে লাল তারকা চিহ্ন তুলে দেয়া হয়েছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে একটি রেড স্টার মার্ক দেওয়া রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি প্রোগ্রামের অনুমোদন নিয়ে সেই প্রোগ্রামের অন্তরালে আরও ১০টি প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ বলে জানিয়েছে ইউজিসি।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ৬টি কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লাল তালিকাভুক্তি করবে বলে জানিয়েছিল ইউজিসি। সেবার যুক্ত হয়েছিল নতুন দুই কারণ— রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ না দেওয়া এবং অডিট প্রতিবেদন প্রদান সংক্রান্ত আরেকটি কারণ।

৬ কারণে লাল তালিকায় পড়বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

১) কমিশন অননুমোদিত প্রোগ্রাম/কোর্স পরিচালনা করলে;

২) কমিশন অননুমোদিত ভবন/ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলে;

৩) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মালিকানা সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে মামলা থাকলে;

৪) কমিশন অনুমোদিত আসন সংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করলে;

৫) যেসকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ মাসের অধিক সময়ের জন্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য কর্তৃক নিযুক্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকলে;

৬) ২ বছর আইনের ৪৫ ধারা মোতাবেক পরবর্তী আর্থিক বৎসরের ৩১ মার্চের মধ্যে সরকার কর্তৃক মনোনীত অডিট ফার্ম কর্তৃক নিরীক্ষিত প্রতিবেদন কমিশনে প্রেরণ না করলে।

আইন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ— এই তিন পদে নিয়োগ দিতে একেকটি পদের বিপরীতে তিনজন অধ্যাপকের নাম প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেগুলোর ইউজিসির মাধ্যমে যাচাই করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন।

তবে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম না মেনে নিজেরাই এসব পদ ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বছরের পর বছর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালায়। অভিযোগ রয়েছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের প্যানেল সরকারের কাছে না পাঠিয়ে নিজেদের মতো করে একটি প্যানেল পাঠায়। পরে সেটি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত আসে। এরপর থমকে যায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড এবং মালিকরা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়।