০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২১:২৯

রেস্টুরেন্টে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ‘নেতিবাচক আলোচনার’ অভিযোগ এনে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের স্থায়ী বহিষ্কার

ইইউবি ও ছাত্রদল লোগো  © টিডিসি সম্পাদিত

রাজধানীর কাচ্চি ভাই নামক রেস্টুরেন্টে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা, ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে পোস্ট করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (ইইউবি) শাখা ছাত্রদলের ৪ নেতাকর্মীকে বহিস্কার করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ৩ জনকে স্থায়ী বহিস্কার ও একজনকে ১ বছরের জন্য বহিস্কার করা হয়েছে। এছাড়া তিন নেতাকর্মীকে শোকজ করেছে প্রশাসন। তাদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। শাস্তিপ্রাপ্ত প্রত্যেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন।

স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন আইন বিভাগের শেষ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী মশিউর রহমান রাঙ্গা, একই বিভাগের নবম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ও রাজধানীর দারুস সালাম থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদি হাসান এবং বিটিএইচএম বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী মোহাম্মদ ইমরান। আইন বিভাগের নবম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী ইমরান হোসেন জয়কে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।

আরও পড়ুন: এইচএসসির ফল প্রকাশ নিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সভা

এ ছাড়া শোকজ করা হয়েছে ইইউবি ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের নবম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আরিয়ান আহমেদ রোমানকে, একই বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী সাকিব হাসানকে এবং সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী লিনিয়াত ইসলামকে।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মিরপুর-১০ এ কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচক বক্তব্য ও প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে মশিউর রহমান রাঙ্গার বিরুদ্ধে। একটি নোটে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চাওয়ার বিষয়টিও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসেবে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থী মেহেদি হাসানের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়বিরোধী পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেও তুচ্ছ অভিযোগ তুলে প্রশাসন স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বহিষ্কারের নোটিশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা, অসদাচরণ এবং শৃঙ্খলাভঙ্গসহ শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (ইইউবি) থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে গত ২ জুলাই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলেও ২১ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো জবাব না পাওয়ায় ২৩ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যদিকে মেহেদি হাসান লিখিত জবাব দিলেও শিক্ষার পরিবেশ ভঙ্গসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ এনে বহিষ্কার করে প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের নানা অনিয়ম নিয়ে মুখ খোলায় তাদের সঙ্গে এমন অবিচার করা হয়েছে। তারা সব সময় শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কথা বলেছেন। এমনকি চাকরিচ্যুত এক কর্মচারীর মানবিক দিক বিবেচনায় পুনরায় নিয়োগের দাবি তুলেছিলেন। তাদের আরও অভিযোগ, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মূল বেতনের অর্ধেক পরিমাণ বোনাস দেওয়ার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা দিত না, এ নিয়ে তারা বারবার কথা বলেছেন এবং একপ্রকার আন্দোলনও করে ৩৫ শতাংশ বোনাসের ব্যবস্থা করেছেন।

আরও পড়ুন: ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্তদের যোগদান নিয়ে নতুন নির্দেশনা

শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বলেই কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক অভিযোগ তুলেছে। প্রশাসন নানা উপায়ে তাদের থামাতে চাইলেও তারা পিছপা হননি। নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লড়াই করতেই আজ তারা শাস্তির মুখে পড়েছেন।

স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের বহিষ্কার করে এবং বাহিরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী দ্বারা হামলা চালায়। দফায় দফায় কারন দর্শানোর নোটিশ দেয় আমাদের হেয় করার জন্য। বিওটিতে বাবা-ছেলের দ্বন্দ্বে তারা আমাদের শিক্ষা জীবন নিয়ে খেলা করছেন দুর্নীতিবাজ আহমেদ ফরহাদ খান। প্রধান উপদেষ্টা এবং শিক্ষা উপদেষ্টাকে আহবান জানাবো বিষয়টি যেনো দ্রত সমাধান করেন এবং ট্রাষ্টি বোর্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেন ।’

আইন বিভাগের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা মেহেদি হাসান বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সব সময় সোচ্চার ছিলাম। এরই ধারাবাহিকতায় আমি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দাবি দাওয়া ও অনিয়মের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলি। অনিয়ম গুলোর মধ্যে ছিল আমাদের টিউশন ফি হুট করে বারিয়ে দেওয়া, আমাদের ক্যাম্পাসের নামে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া, ভালো এবং কোয়ালিফুল শিক্ষক না নিয়ে আসা, আমাদের ইউনিভার্সিটির প্রথম ক্যাম্পাস নিজের নামে নেওয়া, ইউনিভার্সিটির টাকা নিজের কোম্পানির নামে ট্রান্সফার করাসহ বিভিন্ন অভিযোগের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করি। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার সময় তাদের অনুগত কিছু শিক্ষার্থী আমাদের প্রতিবাদ করার সময় বাধা প্রদান করে, ফলে আমাদের মাঝে হাতাহাতি হয়।

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার পরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম, আমাদের শিক্ষার্থীদের কিছু দাবি আমরা মিডিয়ার সামনে প্রস ব্রিফিং করে তুলে ধরি, আর সেটাই আমাদের জন্য কাল হয়ে দারায়। আমরা কেন এগুলার প্রতিবাদ করলাম, কেন প্রেস ব্রিফিংয়ে তাদের মুখোশ সবার সামনে তুলে ধরা হলো। এ জন্য আমাদের বহিষ্কার করে। যা মূলত আমাদের বাকস্বাধীনতার চরম বাধা এবং আমাদের মৌলিক মত প্রকাশের চেষ্টাকে চরমভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা মাত্র। আর আমার লেখাপড়ার সহ আমাদের জীবন ধ্বংষের ষড়যন্ত্রের অংশ।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অবঃ মেজর আমিনুল রহমান বলেন, ‌‌‘মশিউর রহমান রাঙ্গার নেতৃত্বে মেহেদী, ইমরান, ইমরান হোসেন জয়, প্রক্টর অফিসে এসে একদিনের মধ্যে অডিটোরিয়াম দাবিসহ বিভিন্ন উদ্ভট আবদার শুরু করে। শিক্ষার্থী সূলভ আচরণ না করে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় এবং তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে উপর ভিত্তি করে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়তে পারে

তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা শিক্ষার্থীদের স্পোর্টসের জন্য, পাশের একটি এলাকায় আগুন লাগলে সেখানে সহযোগীতার জন্য এবং বিভিন্ন সামাজিক কাজে ব্যয়ের জন্য এসব টাকা দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ বিষয়গুলো অবগত এবং এজন্যই টাকা দিয়েছে। সেটা সব শিক্ষার্থী জানে।