এনএসইউতে ‘গনঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল অনুষ্ঠিত

এনএসইউতে ‘গনঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল
এনএসইউতে ‘গনঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল  © সৌজন্যে প্রাপ্ত

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের (সিপিএস) উদ্যোগে ‘গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জ, জাতীয় স্বার্থ ও ঐক্যের পথরেখা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২২মার্চ) বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আয়োজিত এ বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এনএসইউ উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে প্যানেলিস্ট হিসেবে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লে. জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি এবং এনসিপি সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা।

গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস্ স্টাডিজের (সিপিএস) ডিরেক্টর ড. এম জসিম উদ্দিন। বৈঠকের শুরুতে ড. জসিম জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ এবং ইসরায়েলি বর্বরতা এবং নৃশংসতায় যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাদের সম্মানে সকলকে নিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

প্রধান অথিতি উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘৫ই আগষ্ট আমাদের তরুণরা ফ্যাসিবাদের ব্র‍্যান্ড 'মুজিববাদ' কে পরাজিত করেছে। তরুণদের হাত ধরে যে বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে, তা পথভ্রষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। এই বিজয় ধরে রাখার জন্য ৫ই আগষ্টের শক্তির ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে।’

লে. জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ বলেন, ‘পুলিশ কারো দলের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার অস্ত্র হতে চায় না।  তারা একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন চেয়েছে। মানুষ পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অবসান চায়। নীতিগতভাবে একমত হলেও পুলিশ সংস্কার কমিশন এই ব্যপারে সুনির্দিষ্ট কোনো ফ্রেমওয়ার্ক দেয়নি।’

বৈঠকে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ২.০ অনুধাবন করার  জন্য আমাদের আগে বাংলাদেশ ১.০ বুঝতে হবে।" তিনি আরো বলেন, "বাংলাদেশ ১.০ এর ব্যর্থতা হচ্ছে, যারা এ পর্যন্ত দেশ শাসন করেছে, তারা কেউ দেশটাকে রিপাবলিক করতে পারেনি। এই রাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিল জমিদার এবং প্রজার সম্পর্ক, রাষ্ট্র এবং নাগরিকের সম্পর্ক নয়।’

ড. মাহদী আমিন বলেন, ‘বিএনপি গত ১৫ বছর সবচেয়ে বেশি অন্যায়, নিপীড়নের শিকার হয়েছে। বিএনপি একা আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে পারেনি, কিন্তু সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ যখন তরুণদের সাথে আন্দোলনে নেমে এসেছিল, গোটা বাংলাদেশ বনাম ফ্যাসিবাদ লড়াই হয়েছিল, তার কারণেই আমরা নতুন একটি বাংলাদেশ পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, "বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কোনোভাবেই যেন দেশে ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান না হয়।’

এছাড়া সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংস্কার হচ্ছে একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের সাথে সংস্কারের বিরোধিতা নেই। ২০২৩ সালে ৩১ দফা ঘোষণার মাধ্যমে বিএনপি সবার আগে সংস্কার নিয়ে কথা বলেছে। আমাদের দলের দর্শন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু বাকী সকল প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই রাষ্ট্রের সমস্যা হচ্ছে ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে। রাষ্ট্রের বর্তমান কাঠামো মানুষকে ছুড়ে ফেলে দেয় এবং ফ্যাসিস্ট প্রবণতা রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যেই ছিল।" ঐক্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, “যদি আমাদের লক্ষ্য হয় গণতান্ত্রিক দেশ, তবে জাতীয় ঐক্য রক্ষা করা দরকার। এবং এর জন্য সর্বসম্মত  ন্যাশনাল চার্টারে যেতে হবে। প্রতিযোগিতা থাকবে কিন্তু জাতীয় ঐক্য কে ছাড়িয়ে গেলে আমরা সংঘর্ষ এবং খাদের দিকে এগিয়ে যাব।’

ডা. তাসনিম জারা বলেন, ‘গনঅভ্যুত্থান  শুধুমাত্র এক শাসক থেকে আরেক শাসক আসার জন্য হয়নি। এটি হয়েছিল একটি নতুন বাংলাদেশের জন্য। আমাদের রাষ্ট্রের কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত পরিবর্তন করতে হবে।’ এছাড়াও তিনি ভয়ভীতির রাজনীতি থেকে বের হয়ে, সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রয়োজনের কথা বলেন।

সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী বলেন, ‘জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকা ছাড়া আর কি কোনো উপায় আছে? গত স্বৈরাচার সরকার আমাদের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে।  আমরা যদি একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই তাহলে আমাদের পার্লামেন্ট, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সহ সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে যাতে এই প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের জন্য কাজ করে একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে।’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস্ স্টাডিজের (সিপিএস) ডিরেক্টর ড. এম জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় ভারতের সরকার, বিরোধীদল এবং মিডিয়ার ঐক্যবদ্ধ অবস্থান অবাক করার মতো। কিন্তু আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থে আদিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছি কি" বলে প্রশ্ন তোলেন। তিনি আরো বলেন, আবু সাঈদের রক্ত দেয়া জাতীয় স্বার্থের জন্য।  আমাদের জেন্-জিরা রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে, তারা কতটা চিন্তাশীল জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষেত্রে।’


সর্বশেষ সংবাদ