স্বাধীনতার পক্ষে বয়ান দেয়া ফ্যাসিস্ট আ’লীগই আসল স্বাধীনতাবিরোধী: মতিউর রহমান আক্ন্দ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২১ PM , আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২১ PM
স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আমরা কেবল একটি কথা শুনে এসেছি স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষের শক্তি। অথচ স্বাধীনতার পর যদি কোন ব্যক্তি তার বক্তব্য ও আচার-আচরণের মাধ্যমে এর বিরোধিতা করেন তিনি হলেন স্বাধীনতাবিরোধী। বিষয়টি উল্লেখ করে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আক্ন্দ বলেছেন, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যারাই এত দিন স্বাধীনতাবিরোধী বলে বয়ান দিয়েছেন সেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আসল স্বাধীনতাবিরোধী।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর ২০২৪) মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গুলশান ক্যাম্পাসের কর্ডোভা সেমিনার হলে মহান বিজয় দিবস ২০২৪ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বাধীনতার আগে ভারতের সঙ্গে অস্থায়ী সরকার যে সাত দফা চুক্তি করেছিল তাতে কয়েকটি বিপজ্জনক পয়েন্ট ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, চুক্তির মধ্যে একটি পয়েন্ট ছিল বাংলাদেশর পররাষ্ট্র নীতি হবে ভারতের পররাষ্ট্র নীতির অনুরূপ এবং বাংলাদেশের আলাদা কোন স্বাতন্ত্র্য প্রতিরক্ষার প্রয়োজন নেই। আজ পর্যন্ত এই চুক্তিটি বাতিল হয়নি। ফলে বাংলাদেশ এখনও ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিন্তাবিদ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক বিজয় দিবসের তাৎপর্য নিয়ে বক্তব্য ও প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আরও বক্তব্য রাখেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব, মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস. এম. মাহবুব-উল-আলম, সিএসই বিভাগের প্রফেসর ড. রমিত আজাদ ও আইন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ডিন প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান।
অনুষ্ঠানে অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আক্ন্দ ১৯৭০ সালের নির্বাচন পরবর্তী ঘটনায় ডাকসু’র সাবেক জিএস অধ্যাপক গোলাম আজমের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী দলের কাছে পাকিস্তানের দায়িত্ব অর্পণের আহবান জানিয়ে বলেছিলেন ‘নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হলে তা হবে গৌরব, মর্যাদা ও সম্মানের। কিন্তু তা না করে বাংলাদেশকে ভারতের অধীনতার দিকে ঠেলে দেয়া হলো। জেনে শুনে ভারতের অধীনতার পক্ষে কোন কাজে অংশগ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
‘তার ওই বক্তটি যখন আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল তখন কেউ তাকে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে মন্তব্য করেননি। উলটো আদালত বলেছেন গোলাম আজমের ওই বক্তব্যটি ছিল রাজনৈতিক, কোন দোষের নয়’- যোগ করেন অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আক্ন্দ।
তিনি যুব সমাজকে মাদকের কবল থেকে ফিরিয়ে আনতে মানারাত ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করার আহবান জানিয়ে বলেন, গেল ৫৩ বছরেও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার এর কোনটিই প্রতিষ্ঠিত হয়নি। উলটো যুব সমাজের মাঝে মাদক ঢুকিয়ে সম্ভাবনার এই বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে এ সময়।
আধিপত্যমূলক কোন বশ্যতা এ জাতি মেনে নেবে না বলে ভারতের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ও বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, আমাদের দেশকে চৌকো বাংলাদেশ, হিন্দুল্যান্ড, দক্ষিণ-পশ্চিমের কয়েকটি জেলা নিয়ে স্বাধীন বঙ্গভূমি বানানো, শান্তিবাহিনী নিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা- এ সব ষড়যন্ত্র কারা করছে আমাদের জানা আছে। জুলাই বিপ্লবের বীররা তাদের চক্রান্ত মেনে নেবে না। ৭১ সালে আমাদের তরুণ প্রজন্মও তা মেনে নেয়নি।
‘ভারত আমাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে আছে এই ভাবনার মাধ্যমে আমাদেরকে পরাধীনতার ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে’ মন্তব্য করে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস. এম. মাহবুব-উল-আলম বলেন, আমরাও ভারতের চারদিকেই আছি। সুতরাং ভারতকে প্রতিহত করতে আমরাও কি রকম কৌশলগত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি সেটাও আমাদেরকে ভাবতে হবে।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. রমিত আজাদ বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম যে আশার আলো জ্বালিয়েছে তার মধ্যেই রয়েছে নতুন সম্ভাবনার শক্তি ও ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। ফলে এখন আর এই প্রজন্মের কাছে দেশের গুরুভার চাপিয়ে দিতে বাধা নেই। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস অধিকতর একটি শক্তিশালী বাংলাদেশ গঠন করবে আমাদের এই প্রজন্ম।
রেজিস্ট্রার ড. মো. মোয়াজ্জম হোসেনের স্বাগত বক্তৃতার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান শেষে ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধসহ ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের শহিদদের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রধান ড. মো. রহুল আমিন।