স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া নিয়ে ‘পাল্টাপাল্টি অবস্থান’ মানারাত ইউনিভার্সিটিতে
রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে থাকা শিক্ষার্থীদের আশুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাসে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এমআইইউ) কর্তৃপক্ষ। তবে এ ক্যাম্পাসে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের গুলশান ক্যাম্পাসে তাদের পড়াশোনা সম্পন্ন করার আশ্বাসেই ভর্তি নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। ফলে হঠাৎ করে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করার উদ্যোগে শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ এবং ক্ষোভ দেখা গেছে।
এর মধ্যে গতকাল প্রধান ক্যাম্পাস পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য আন্দোলনে থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তারা গুলশানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাস রাখার দাবি জানান। বুধবার বিকেলে বহিরাগত কিছু মানুষ গুলশান ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে হুমকি-ধামকি দেয়। এ নিয়ে মূলত শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে।
এখানে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রুম স্কুলকে দেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষগুলো আমাদেরই আছে—ড. মো. মোয়াজ্জম হোসেন, রেজিস্ট্রার, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকটি কক্ষ পাশে থাকা মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলকে দেয়া হয়েছে বলে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-কর্মকর্তাদের মধ্যে। মূলত স্কুলের জমি এবং ভবনেই গুলশান ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এমআইইউ)। অস্থায়ী ভিত্তিতে পাওয়া এ সুযোগ বন্ধের জন্য নানা সময়ে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) ধরনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমাও বেঁধে দেয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি)। পরবর্তীতে নানা কারণ দেখিয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে পুরোপুরি স্থানান্তর হয়নি উচ্চশিক্ষালয়টির কার্যক্রম। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-কে পাশ কাটিয়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঠদান। আইন অনুযায়ী, অনুমোদিত ক্যাম্পাসের বাইরে কোনো ধরনের পাঠদান করতে পারবে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, মানারাত স্কুলকে ইউনিভার্সিটির কিছু ক্লাস রুম দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানাজানি এবং গুলশান ক্যাম্পাসের অ্যাকাউন্টস বিভাগ আশুলিয়া ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের বিষয়ে তারা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের সঙ্গে অশালীন ভাষার ব্যবহার ও অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গুলশান ক্যাম্পাসের অ্যাকাউন্টস বিভাগ আশুলিয়া ক্যাম্পাসে স্থানান্তর, মানারাত স্কুলকে ইউনিভার্সিটির কিছু ক্লাস রুম দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের একটি দল বর্তমান ভিসির সঙ্গে দেখা করতে তারা বিপরীতমুখী আচরণ দেখতে পান। এর জেরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন এবং নানাবিধ স্লোগান দিতে থাকেন।
গুলশান ক্যাম্পাসে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের এখানেই পড়াশোনা সম্পন্ন করার অনুমতি রয়েছে ইউজিসির—অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত), মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
তাদের অভিযোগ, পূর্বের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন হয়েছে। পাশাপাশি গুলশানে ক্যাম্পাস স্থায়ী করার চেষ্টার দায়ে কয়েকজন শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।
জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের ফিরিয়ে আনা এবং গুলশান ক্যাম্পাস পরিবর্তন না করার দাবি তোলেন আন্দোলনরত বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। অন্যথায় সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: এবার মানারাত স্কুল পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের গুঞ্জন
এর আগে গত জুলাইয়ে রাজধানীর গুলশানে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের জন্য মানববন্ধনও করেছিল গুলশান আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা।
বিষয়টি নিয়ে জানতে কথা হয় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এমআইইউ) রেজিস্ট্রার ড. মো. মোয়াজ্জম হোসেনের সঙ্গে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এখানে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রুম স্কুলকে দেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষগুলো তাদেরই আছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: পুনর্গঠিত হলো মানারাত ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড
তবে তারা কতদিন এখানে থাকবেন বা কবে নাগাদ স্থায়ী ক্যাম্পাসে পুরোপুরি স্থানান্তরিত হবেন—সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।
এর আগে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানাস্তর সংক্রান্ত ইস্যুতে মঙ্গলবার মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এমআইইউ) উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আব্দুর রব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, গুলশান ক্যাম্পাসে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের এখানেই পড়াশোনা সম্পন্ন করার অনুমতি রয়েছে ইউজিসির। তবে কতদিন নাগাদ এ অনুমোদন রয়েছে—সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানাতে পারেননি তিনি।