কোটা আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিহত বেশি কেন?
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশে এখন পর্যন্ত ২ শতাধিকেরও বেশি আন্দোলনকারী এবং শিক্ষার্থীদের মৃত্যু হয়েছে। আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের দাবি এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্য ও সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ এবং তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের হামলায় এসব আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি তাদের।
দেশে প্রচলিত ব্যবস্থায় চলমান কোটা প্রথায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সংস্কার চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলেও এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। আন্দোলনে যোগ দেন দেশের সরকারি-বেসরকারিসহ সব শিক্ষালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার নিরাপত্তা জোরদার এবং শিক্ষালয়গুলো বন্ধের ঘোষণা দেয় ক্রমান্বয়ে।
আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি এবং সেখানকার সাধারণ শিক্ষার্থী। আমাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। আমরা মানবিক কারণেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হই এবং দেশের অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পৃক্ততা জানাই। এর বাইরে কোনো কারণ নেই—সমন্বয়ক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলন।
আন্দোলনে অসংখ্য নিহতের ঘটনায় দীর্ঘ সারি ছিল দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদেরও। তবে যোগাযোগ বিঘ্নতাসহ নানা কারণে এ নিহত শিক্ষার্থীদের মোট সংখ্যা এবং তাদের নাম-পরিচয় বিস্তারিত পাওয়া সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই চেষ্টা করছে তাদের সঠিক সংখ্যা এবং বিস্তারিত তথ্য জানতে। তবে বিভিন্ন মাধ্যম প্রাপ্ত তথ্যে এখন পর্যন্ত বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ১২ শিক্ষার্থী নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে নিহত শিক্ষার্থীদের যে তালিকা পাওয়া গেছে; তার মধ্যে রয়েছেন—সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএ’র শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইরফার ভূঁইয়া, নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ওবায়দুল্লাহ এবং আসিফ হাসান। এছাড়াও নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শাকিল পারভেজ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শাহ নেওয়াজ ফাহাদ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী আসিফ ইকবাল।
এর বাইরে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে নিহত হয়েছেন দেশের প্রথম বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত আবদুল্লাহ আল আবীর।
আরও পড়ুন: ভিন্নমত ও দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অপরাধ নয়, সাংবিধানিক অধিকার: টিআইবি
এছাড়াও বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্র্র্যাক এবং বিইউবিএটি দুইজন শিক্ষার্থীরও নিহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে এ দুই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী নিহত অথবা তাদের বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ক্রমান্বয়ে ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তীতে বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে বেশি সম্পৃক্ত হন। এর মধ্যে রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, নতুন বাজার, প্রগতি সরনী, উত্তরা-আজমপুর এবং যাত্রাবাড়িতে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এতে প্রাণহানির শিকার হন বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও তাদের একটি বড় অংশের আহত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। আন্দোলনের শুরুর দিকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ প্রথম পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। তবে রাজধানীতে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: ঢালাওভাবে মামলা-গ্রেপ্তার বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি সুজনের
এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার বাতিল চেয়ে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন তীব্র হতে থাকলে তা দমাতে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকার সমর্থকরা। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালাতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২শ’র বেশি নিহত এবং কয়েক হাজার আন্দোলনকারী আহত হয়েছে। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলনে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষতি ৩২ কোটি টাকা
‘বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলন’র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বয়ক হাসিবুল হোসেন শান্ত, আয়াতুল্লাহ বেহেস্তি এবং শিহাব হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অংশগ্রহনের মাধ্যমে একাত্মতা প্রকাশ করি।
‘আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী আমাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নাই। আমরা মানবিক কারণেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হই এবং দেশের অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পৃক্ততা জানাই।’ এর বাইরে কোনো কারণ নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য বলছে, দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট আর্থিক ক্ষতি ২৮ কোটি ৭৯ লাখ ১১ হাজার ১৬০ টাকা। বিপরীতে চারটি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৩ লাখ টাকা।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও তাদের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত ২১ জন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত কলেজে ৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইউজিসি। এর বাইরে বিভিন্ন বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ১২ শিক্ষার্থী নিহতের খবর পাওয়া গেছে।