অনলাইনে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখে ২ শতাংশ শিক্ষার্থী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৯:১৪ PM , আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৯:১৯ PM
করোনা মহামারীতে দেশের গ্রামীণ জনপদের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ছিল। এর মধ্যে দুই শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখেছেন। ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে কোনো শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখেননি।
শনিবার (২৯ জুন) ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ কর্পাস: পাবলিক লেকচার সিরিজ-২০২৪’ এর অংশ হিসেবে “বাংলাদেশের স্কুল, দক্ষতা এবং শিক্ষার অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং-এর প্রফেসর নিয়াজ আসাদুল্লাহ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে প্রফেসর নিয়াজ আসাদুল্লাহ জানান, গ্রামীণ জনপদের ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থীর টিভি দেখার সুযোগ ছিল। আর ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর সেই সুযোগ ছিল। যাদের টিভি দেখার সুযোগ ছিল তাদের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টিভিতে সরকার পরিচালিত ক্লাস করেছে। ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টিভিতে ক্লাসের বাইরে ছিলেন।
প্রাথমিকের ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা শেষ করলেও রিডিং পড়তে পারেন না জানিয়ে প্রফেসর নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিখন পর্যায় ৭ম শ্রেণির মানের হলেও অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিখন পর্যায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যায়ের রয়ে গেছে।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে সাবেক শিক্ষা সচিব ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান (এনআই খান) বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে। এর দুটি কারণ রয়েছে। একটি হলো-স্বল্প বেতন; আরেকটি হলো শিক্ষকদের নিজ বাড়ি থেকে অনেক দূরের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে হয়। আমাদের জিডিপি অনুযায়ী শিক্ষকদের বেতন ঠিক আছে বলে ধরা হয়। তবে বর্তমান বাজার চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষকদের যে বেতন দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় কম। এই অল্প বেতনে শিক্ষকরা নিজ বাড়ি থেকে অনেক দূরের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে আগ্রহ দেখান না। এজন্য শিক্ষক সংকট দূর করা যাচ্ছে না।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমানে যারা বিসিএস ক্যাডার হচ্ছেন, তাদের ৭০ শতাংশই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান। চিকিৎসকের সন্তান চিকিৎসক হচ্ছেন। কৃষকের সন্তান খুব কমই বিসিএস ক্যাডার হচ্ছে। যারা যে পেশার সাথে সম্পৃক্ত, তাদের সন্তানেরা সেই পেশাতেই আসছে।
আমাদের দেশে যারা উচ্চশিক্ষিত হয় তাদের অধিকাংশই বাইরে চলে যায় জানিয়ে এনআই খান বলেন, আমাদের উচ্চশিক্ষিতদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা কম, তারা কোনো বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠায় না। অন্যদিকে শ্রমজীবীদের দেশের প্রতি টান বেশি থাকে। তারা কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে। সেই অর্থ দেশে পাঠায়। এই অর্থ দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে।
সাবেক শিক্ষা সচিব বলেন, অনেকেই বলছেন, শিক্ষা থেকে মুখস্থ বিদ্যা তুলে দেবেন। তবে মুখস্থ বিদ্যারও দরকার আছে। আপনি চাইলেও শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করা থেকে বের করে আনতে পারবেন না। মুখস্থ করা ছাড়া আপনি নামাজ পড়তে পারবেন না। একজন গায়ক গানের কলি মুখস্থ না করলে তিনি সেভাবে গান গাইতে পারবেন না। শিক্ষাকে জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউআইইউ’র উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আবুল কাশেম মিয়া এবং ইউআইইউ’র স্কুল অফ বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মুসা। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী এবং আমন্ত্রিত অথিতিরা উপস্থিত ছিলেন।