পরিশ্রম ও শৃঙ্খলাময় পড়াশোনায় সোনা মোড়ানো সাফল্য তাদের

সমাবর্তনে এই ৪ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে স্বর্ণপদক
সমাবর্তনে এই ৪ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে স্বর্ণপদক  © টিডিসি ফটো

দেশের অন্যতম স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ)’ ৭ম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি)। এবারের সমাবর্তনে বেসরকারি এ উচ্চশিক্ষালয়ের ৩ হাজার ৯৫৪ জন শিক্ষার্থী তাদের সনদ গ্রহণ করার কথা রয়েছে। এছাড়াও এবারের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চারজন শিক্ষার্থীকে তাদের শিক্ষা জীবনে কৃতিত্বের সাফল্য স্বরূপ দেওয়া হবে ‘স্বর্ণপদক’।

সমাবর্তনে স্বর্ণপদকের মনোনয়ন পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তারেক হাসান, মরিয়ম বিনতে আব্দুর রউফ, রানা মো. শাহরিয়ার পারভেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এমবিএ) শিক্ষার্থী মো. ওয়াসিফ ইমাম। এর মধ্যে মো. ওয়াসিফ ইমরান ও রানা মো. শাহরিয়ার পারভেজ তাদের স্নাতোকোত্তর এবং বাকিরা স্নাতকে কৃতিত্বের সাফল্য স্বরূপ এবার স্বর্ণপদক পাচ্ছেন। তাদের সবারই সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৪.০০ রয়েছে।

সমাবর্তনে ৪ শিক্ষার্থীকে তাদের শিক্ষা জীবনে কৃতিত্বের সাফল্য স্বরূপ দেওয়া হবে ‘স্বর্ণপদক’। ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

সোনায় মোড়ানো এ সাফল্যের পেছনের গল্প নিয়ে ইউআইইউ’র এ কৃতী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। গল্প-আড্ডায় এ তরুণরা জানিয়েছেন, তাদের এ অর্জন সহজ ছিল না। এছাড়াও তাদের এ অর্জনে জন্য পোড়াতে হয়েছে অনেক কাঠ-খড়। কঠোর অধ্যবসায়, অটুট লক্ষ এবং তার সাথে সমন্বয় করে কাজ এ সাফল্য এনে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃতী এ শিক্ষার্থীরা।

তারা বলছেন, কোনো অর্জনই সহজ নয়। তার জন্য লেগে থাকার মানসিকতা এবং থাকতে হবে নিজের লক্ষ অর্জনের দৃঢ় সংকল্পও। এছাড়া নিজের আত্মবিশ্বাস এবং শৃঙ্খলিত সময় ব্যবস্থাপনা তরুণ শিক্ষার্থীদের সাফল্য এনে দেবে বলেও জানান তারা।

সমাবর্তনে স্বর্ণপদকের মনোনয়ন পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তারেক হাসান, মরিয়ম বিনতে আব্দুর রউফ, রানা মো. শাহরিয়ার পারভেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এমবিএ) শিক্ষার্থী মো. ওয়াসিফ ইমাম।

নিজের অর্জনে সন্তুষ্টি আর উচ্ছ্বাস জানিয়েছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) কম্পিউটার বিজ্ঞান (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তারেক হাসান। গল্প-আলাপে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলছেন, এ অর্জন আমাকে আরও বেশি শিখতে উৎসাহিত করবে। স্নাতকের শুরুর দিকে ফলাফল ভালো করার বিষয়ে জোর দিলেও এরপর আমি আসলে শেখার প্রতি মনোযোগী হতে শুরু করি যা আমাকে ফলাফল ভালো করতে সাহায্য তো করেছেই, একই সাথে আমাকে অনেক বেশি এগিয়েও রেখেছে। আমি আমার নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখি এবং এটিই মূলত আমাকে শেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। এরপর থেকেই আমি সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে শিখতে থাকি; যা আমাকে আজকের এ সাফল্য এনে দিয়েছে।

মো. তারেক হাসান। ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

কোনো অর্জনকে নিজের করে বাগিয়ে আনতে স্থিরভাবে লেগে থাকা এবং নিজের সর্বোচ্চ উদ্যম থাকতে হবে জানিয়ে মো. তারেক হাসান বলছেন, পড়াশোনা করতে হবে নিয়মিত এবং তা যদি প্রতিদিন এক ঘণ্টাও হয় তাতেও খুব বেশি অসুবিধা হবে না। কিন্তু শুধু পরীক্ষার আগের রাত্রে পড়ে হয়ত ফলাফল ভালো করা যাবে, কিন্তু শেখাটা যে আসলে কতটা সম্ভব তা নিয়ে আমি সন্দিহান। মূলকথা হল যে, শেখার আনন্দটা খুঁজে বের করতে হবে, এবং সেটা নিজেকেই করতে হবে। এছাড়াও সময়ের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে এবং আমি নিজেও এতে সাফল্য পেয়েছি।

স্নাতক শেষ করার সাথে সাথেই স্যামসাং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের সুযোগ হয়েছিল ইউআইইউ’র এ শিক্ষার্থীর। বর্তমানে নিজ শিক্ষালয়ে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানেই শিক্ষকতা করছেন তিনি। শিক্ষকতাকে উপভোগ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সামনে ইচ্ছে রয়েছে আরও উচ্চতর পড়াশোনা করারও।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) এবারে সমাবর্তনে স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের আরেকজন কম্পিউটার বিজ্ঞান (সিএসই) বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী রানা মো. শাহরিয়ার পারভেজ। স্নাতকে ভাল ফলাফল ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, “স্নাতকোত্তরে ভাল ফলাফল করা ছিলো আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর ভালো যেহেতু করতেই হবে, তাই আমার লক্ষ্যই ছিলো সর্বোচ্চ ভালো ফলাফল অর্জন করা। আমি বিশ্বাস করি, কেউ যদি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তার পরিকল্পনা করে এবং তা সফল করার জন্য নিরলসভাবে তার পিছনে লেগে থাকে তাহলে সেই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।”

রানা মো. শাহরিয়ার পারভেজ। ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

সফলতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার সাফল্যে পরিবারের ও শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা, উৎসাহ এবং সহযোগিতা অনস্বীকার্য।” আজকের এই সাফল্যে  সময়ানুবর্তিতা অনেক বেশি সহায়তা করেছে বলেও জানিয়েছেন তরুণ এই শিক্ষার্থী ও গবেষক। তিনি প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করে ফেলতেন। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে তিনি কর্মরত রয়েছেন। আগামীতে উচ্চতর পড়াশোনা সম্পন্ন করে আবারও ফিরতে চান দেশমাতৃকায়। এছাড়াও নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার স্বপ্নের কথাও অকপটে জানান এই কৃতী শিক্ষার্থী।

এখানে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন গবেষণাগার রয়েছে। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা গবেষণারও সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার পাশাপাশি তারা সহশিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমেও অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা একটু শৃঙ্খলা মেনে পরিশ্রম করলেই সর্বোচ্চ সাফল্য লাভ করতে পারেঅধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া।

ইউআইইউ’র এবারের সমাবর্তনে স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত আরেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনোমিক্স বিভাগের মারিয়াম বিনতে আব্দুর রউফ। বর্তমানে ‘ওয়াইজ’ নামে পরিচিত বহুজাতিক একটি আর্থিক প্রযুক্তি (ফিনটেক) কোম্পানিতে কাজ করছেন তিনি। বর্তমানে বিশ্বের ৩০ টিরও বেশি দেশে কাজ করা ‘ওয়াইজ’ বিশ্বব্যাপী ১৭ মিলিয়ন গ্রাহকের প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি পাবলিক কোম্পানি। 

ইকোনোমিক্স বিভাগের কৃতী এই শিক্ষার্থী বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে একটি বিশেষ দলে কাজ করছেন। যারা বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংকগুলোকে ইকোসিস্টেমের সাথে সংযুক্ত করে এবং গ্রাহকদের ১৫০টিরও বেশি ক্রস কারেন্সি লেনদেনে সক্ষম করে। প্ল্যাটফর্ম ডিউ ডিলিজেন্স স্পেশালিস্ট হিসাবে মারিয়াম বিনতে আব্দুর রউফ ব্যাংকিং সহযোগীদের সাথে যথাযথ যোগাযোগ, ব্যবসার উন্নয়ন এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধিতে কাজ করে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মারিয়াম বিনতে আব্দুর রউফ। ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

শুরু থেকেই ভালো ফলাফল ছিল জানিয়ে মারিয়াম বিনতে আব্দুর রউফ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাকে অনেক বেশি সহায়তা করেছে। আমার নিজের লক্ষ্যের প্রতি অটুট আস্থা এবং প্রতিনিয়ত কাজ করে যাওয়া সাফল্য এনে দিয়েছে। সামনের দিনে ‘ডাটা সায়েন্স’ নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার ইচ্ছার কথা জানিয়ে তিনি নবীনদের উদ্দেশ্যে বলেন, শ্রেণিকক্ষে অধিক মনোযোগ এবং নিজের আগ্রহের বিষয়ে গবেষণা তাদের সাফল্য এনে দেবে। 

আরও পড়ুন: ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের বিজয় কেতনধারী ইউআইইউ

ইউআইইউ’র এবারের সমাবর্তনে স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত আরেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষালয়টির মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এমবিএ) শিক্ষার্থী মো. ওয়াসিফ ইমাম। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, চ্যালেঞ্জ এবং অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ একটি বিশ্বে যাত্রা শিক্ষা এবং কর্মজীবন প্রায়ই ক্ষমতার একটি প্রমাণ হিসাবে কাজ করে। সেজন্য স্থিতিস্থাপকতা, সংকল্প এবং অটুট প্রতিশ্রুতি দরকার বলে জানান তিনি। নিজের এই অর্জনের পেছনে অধ্যবসায় এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণেই সম্ভব হয়েছে।

মো. ওয়াসিফ ইমাম। ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর পড়াশোনার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন কৃতী এই শিক্ষার্থী। দেশে এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা এবং নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার উদ্যম এ তরুণকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। তিনি বলেন, ইউআইইউ আমার গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ও অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার এবং একটি ইতিবাচক মানসিকতা স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। 

ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়তে কাজ করছে বলে জানান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এখানে শিক্ষার্থীরা ভালো পড়াশোনার পাশাপাশি হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পাচ্ছে। এখানে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন গবেষণাগার রয়েছে। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা গবেষণারও সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার পাশাপাশি তারা সহশিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমেও অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা একটু শৃঙ্খলা মেনে পরিশ্রম করলেই সর্বোচ্চ সাফল্য লাভ করতে পারে।

অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া। টিডিসি ফটো

অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্যই হলো দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা। আমরা চাই, ইউআইইউ’র গ্র্যাজুয়েটরা যেন চাকরির বাজারে গিয়ে ‘ডে ওয়ানে’ কাজ করতে পারে। উদাহরণ যুক্ত করে উপাচার্য বলেন, যেমন একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করতে যেসব দক্ষতার প্রয়োজন হবে—আমরা শিক্ষার্থীদের তা শেখাবো। আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত যোগ্যতা কাজে লাগিয়েই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ‘ডে ওয়ান’ ভিত্তিতে চাকরির সুযোগ পাবে। আমরা বিভিন্নভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘এক্সিলেন্স’ তৈরিতে কাজ করছি— যেন তারা আগামীর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হতে পারে


সর্বশেষ সংবাদ