বাংলাদেশের সঙ্গে ৭ খাতে যৌথভাবে কাজ করতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া: নর্থ সাউথে রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে দক্ষিণ কোরিয়া তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, সমুদ্র অর্থনীতিসহ সাতটি খাতে সরাসরি কাজ করতে আগ্রহী। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে (এনএসইউ) আয়োজিত ‘মডার্ন কোরিয়া: হিস্টোরি, ডেমোক্রেসি, ইকোনমি, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এনএসইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের (সিপিএস) আয়োজনে উচ্চশিক্ষালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্টরা অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনার শুরুতে রাষ্ট্রদূত কোরিয়ার বিগত উন্নতির বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি তার থেকে বাংলাদেশের করণীয় বিষয়গুলোয় আলোকপাত করেন। তিনি বাংলাদেশে তার দেশের বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ, সহযোগিতা ও আগামী দিনের করণীয় বিষয়গুলো তুলে বলেন, আগামীতে কোরিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সহযোগিতার অংশ হিসেবে সাতটি খাতে যৌথভাবে কাজ করতে পারে।
আরও পড়ুন: শান্তি বজায় রাখতে এগিয়ে আসতে হবে তরুণদের: পিটার হাস
এর মধ্যে বাংলাদেশে তৈরি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙা শিল্প, সমুদ্র অর্থনীতি ও গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ, কৃষি ও কৃষি যন্ত্রাংশ এবং গ্রিন হাউজ ও কার্বন নিঃসরণ পরিকল্পনা নিয়ে যৌথ অংশীদারত্বের বিষয়গুলোও তুলে ধরেন পার্ক ইয়ং-সিক।
দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশ ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের রেকর্ড করেছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক বলেন, বাংলাদেশের সম্পর্কের এ ৫০ বছরে বাংলাদেশ কোরিয়ার প্রগাঢ় সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব হয়েছে। এসময় তিনি ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব কারও সাথে বৈরিতা নয়’ বাংলাদেশের এমন পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করে প্রশ্ন তোলেন—বাংলাদেশ ইজরায়েলের সমালোচনা করলেও কেন হামাসের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান প্রকাশ করেনি—এমন অবস্থানের বিষয়েও।
বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা ও কোরিয়া-বাংলাদেশ ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের পাশাপাশি প্রশিক্ষকদেরও প্রশিক্ষিত করতে আগ্রহী কোরিয়া—জানান পার্ক ইয়ং-সিক। অনুষ্ঠানের আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। এসময় পরমাণু শান্তি চুক্তিতে কোরিয়ার স্বাক্ষর না করা, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী-গবেষকদের জন্য কোরীয় সরকারের বিভিন্ন নীতি-করনীয় বিষয় আলোচনায় উঠে আসে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, গেল বছর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পালিত হয়েছে। বিগত পাঁচ দশকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন ও দুই দেশের নাগরিকদের সম্পর্ক বিনিময়ের এক অসাধারণ যাত্রার সাক্ষী কোরিয়া। তিনি বলেন, এই ব্যাপক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শেকড় খুঁজতে গেলে আমাদের যেতে হবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) কারখানা স্থাপনের শুরুর দিকে।
আরও পড়ুন: সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে ‘পুল’ চায় ইউজিসি
বাংলাদেশের ‘দেশ গার্মেন্ট’ ও কোরীয় কোম্পানি ‘দায়েউ’ ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের গোড়াপত্তন করে জানিয়ে পার্ক ইয়ং বলেন, এরপর থেকেই বাংলাদেশের আরএমজি খাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধিতে কোরীয় কোম্পানিগুলো ব্যাপক অবদান রেখে আসছে, যা এখন বাংলাদেশের রপ্তানিতে ৮৪ শতাংশ অবদান রাখছে।
কোরীয় উপদ্বীপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, শান্তি স্থাপনে দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। তারা স্বাধীনতার পর দীর্ঘ পথযাত্রায় বাংলাদেশের সহযাত্রী হয়েছে এবং কোরিয়া অর্থনৈতিক উন্নতি, দুর্নীতি দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ও উঠে আসে অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলামের সভাপতির বক্তব্যে।