ছাত্রীদের নিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো গণিতকন্যা উৎসবের আয়োজন

ন্যাশনাল গার্লস ম্যাথেম্যাটিক্স অলিম্পিয়াড
ন্যাশনাল গার্লস ম্যাথেম্যাটিক্স অলিম্পিয়াড  © সংগৃহীত

সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুল কলেজের ছাত্রীদের নিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় গণিতকন্যা উৎসব ২০২৩-ন্যাশনাল গার্লস ম্যাথেম্যাটিক্স অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে এই অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে গণিতকন্যা ফাউন্ডেশন। এই গার্লস ম্যাথেম্যাটিক্স অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে তীব্র জলাবদ্ধতা উপেক্ষা করে, সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরা সকাল ৭ টা থেকে জড়ো হয়  ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে। 

এই অলিম্পিয়াডের লক্ষ্য হলো সব বাঁধা দূর করে গণিত ও বিজ্ঞানে মেয়েদের নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটানো। বাংলাদেশ গণিতকন্যা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই গণিত উৎসব দেশে প্রথমবারের মতো শুধু মেয়েদের জন্য আয়োজিত জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড। বাংলাদেশ গণিতকন্যা ফাউন্ডেশনের প্রত্যয়, বার্ষিক ভাবে এই আয়োজন করার।

এবারের আসরে প্রায় দুই শতাধিক মেধাবী মেয়েদের তিন ক্যাটাগরিতে (জুনিয়র, সেকেন্ডারি, ও হায়ার সেকেন্ডারি) ভাগ করে পরীক্ষা নেওয়া হয়। সকাল ১০টা থেকে ১২:৩০ পর্যন্ত চলমান অলিম্পিয়াডে যাচাই করা হয় মেয়েদের গণিতের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা।

ফেইসবুকে গণিতকন্যা পেইজে লাইভের মাধ্যমে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর আয়োজনের বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। নির্বাচিত প্রতিযোগীদের নিয়ে এরপরে আয়োজিত হবে জাতীয় গণিত ক্যাম্প, যেখানে তাদের আরো নিবিড় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গণিতের দক্ষ করে তোলা হবে। গণিতে আগ্রহ বৃদ্ধির প্রত্যয় নিয়ে আয়োজন করা এই অলিম্পিয়াডের বিজয়ীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করা হবে জর্জিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন ইউরোপীয় গার্লস ম্যাথেম্যাটিক্স অলিম্পিয়াড (ইজিএমও) ২০২৪ এ অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ জাতীয় দল।

গণিতকন্যা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন হিসেবে কাজ করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের প্রধান সাদিয়া হামিদ কাজী। বাংলাদেশ গণিতকন্যা ফাউন্ডেশনের কমিটিতে যুক্ত আছেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক ইয়াসমীন হক, অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, সারাহ আহমেদ, সুমাইয়া নাজীন, ড. সৌমিত্র চক্রবর্তীর মতো দেশ বরেণ্য বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ। বাংলাদেশের গণিতপ্রেমি মেয়েদের জন্য নিরাপদ ও অনুপ্রেরণাদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে এবং বিশ্ব মঞ্চে তাদের অগ্রযাত্রা সুনিশ্চিত করতে ঈপ্সিতা বহ্নি উপমা, জাদিদ হাসান, তামান্না ইসলাম ঊর্মির উদ্যোগে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ গণিতকন্যা ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়।

দেশের মেয়েরা ২০২১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক গণিত মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছে। এই অল্প সময়ের মধ্যে অসামান্য কৃতিত্ব বয়ে এনেছে গণিতকন্যারা। প্রথমবার অংশ নিয়েই ২০২১ সালের ইজিএমও তে রৌপ্য পদক লাভ থেকে শুরু করে ২০২৩ সালের আসরে বিশ্বের মধ্যে দলগতভাবে ২০ তম স্থান অধিকারের সাথে একটি রৌপ্য ও দুইটি ব্রোঞ্জ পদক লাভ দেশের গণিতকন্যাদের হার না মানা আত্মপ্রত্যয়েরই সাক্ষ্য দেয়। ইজিএমও তেও গণিতকন্যাদের সাফল্য ঈর্ষনীয়।

রায়ান বিনতে মোস্তফা ২০২১ ও ২০২২ সালের পরপর দুইবার ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছেন। আবার প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েই ২০২৩ আসরে সানিভা রাকিব সোহা ব্রোঞ্জ পদক লাভের গৌরব অর্জন করে। গণিতকন্যাদের উদ্যমতা ও পরিশ্রমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো নুজহাত আহমেদ দিশা, যে কিনা ইজিএমওতে '২১ সাল থেকে বাংলাদেশ দলের নিয়মিত প্রতিযোগী এবং দুইটি রৌপ্য এবং একটি ব্রোঞ্জ পদক জয়ী। এছাড়াও ২০১১ সালের পর থেকে নুজহাতই প্রথম মেয়ে যিনি আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও এ বছর গণিতের এই বিশ্ব আসরে মির্জাখানি পদক অর্জন করেন নুজহাত। বাংলাদেশ গণিতকন্যা ফাউন্ডেশনের স্বপ্ন – বাংলাদেশের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে এরকম শতশত নুজহাত, সানিভা ও রায়ানদের খুঁজে বের করে তাদের আকাশ ছোঁয়ার জন্য প্রস্তুত করা।

জাতীয় গণিতকন্যা দলের ভলান্টারি কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেটা এন্ড সায়েন্স স্কুলের ডীন অধ্যাপক মাহবুব মজুমদার। অলিম্পিয়াড আয়োজন সম্পর্কে অধ্যাপক মাহবুবুল আলম মজুমদার বলেন, ইতোমধ্যেই বিশ্ব আসরে সেরাদের মধ্যে বাংলাদেশের মেয়েরা নিজেদের প্রমাণ করেছে। আমরা আশা করি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় প্রথমবারের মতো ন্যাশনাল গালর্স ম্যাথ অলিম্পিয়াড আয়োজন, মেয়েদের গাণিতিক উৎকর্ষতা অর্জনে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে। আমরা আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি অংশগ্রহণকারী ছাত্রীদের, আমাদের স্পন্সরদর, আমাদের সকল স্বেচ্ছাসেবকদের ও বিশেষভাবে অভিভাবকদের প্রতি যারা তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছেন আমাদের আয়োজনে। আমরা বিশ্বাস করি এই মেয়েরা সামনে আমাদের জন্য আরো গৌরব বয়ে আনবে, এবং আমাদের এই গার্লস ম্যাথ অলিম্পিয়াড আয়োজন তাদের জীবনে একটি অনুপ্রেরণাদায়ক ভূমিকা রাখবে।

অলিম্পিয়াড থেকে নির্বাচিত ক্ষুদে গণিতবিদদের নিয়ে সামনে আয়োজিত হবে জাতীয় গণিতকন্যা ক্যাম্প, যেখানে নানাস্তরের বাছাই শেষে গঠন করা হবে জাতীয় গণিতকন্যা দল। সেরা চার গণিতকন্যা ইউরোপের জর্জিয়াতে গণিতের বিশ্ব আসরে মেলে ধরবে বাংলাদেশের পতাকা। বাংলাদেশ গণিতকন্যা ফাউন্ডেশন  মেয়েদের বিজ্ঞান ও গণিতচর্চার জন্য একটি নিরাপদ ও অনুপ্রেরণাদায়ক পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই দীর্ঘ পথের সূচনা হিসেবে এবারের জাতীয় গণিতকন্যা উৎসব আয়োজন।


সর্বশেষ সংবাদ