সবচয়ে বেশি টিউশন ফি ব্র্যাকে, কম পুন্ড্র ইউনিভার্সিটিতে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি নির্ধারণে নেই কোনো নীতিমালা। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের থেকে মর্জি মতো আদায় হচ্ছে টিউশন ফি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কত টাকা টিউশন ফি নিচ্ছে– এ ব্যাপারে সম্প্রতি তথ্য তালাশে নামে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তথ্য পেতে দেশের ১০৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠিও দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেয়া তথ্য বলছে, সবচেয়ে বেশি টিউশন ফি নিচ্ছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার বিভাগ। সেখানে পাঁচ বছরে এক শিক্ষার্থীকে পড়তে গুনতে হয় ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৫০ টাকা। আর সর্বনিম্ন ফি নেওয়া হয় পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বি.এড প্রোগ্রাম মাত্র ২০ হাজার টাকায় শেষ করা যায়।
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ দ্বারা দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালনা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু রয়েছে।
ইউজিসির তথ্যে দেখা গেছে, স্নাতক পর্যায়ে বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সর্বোচ্চ ফি নিচ্ছে বি ফার্ম প্রোগ্রামে– ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন ফি অর্থনীতিতে গ্র্যাজুয়েশনে ৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চিটাগাং (ইউএসটিসি) সর্বোচ্চ ফি নিচ্ছে বি ফার্ম প্রোগ্রামে ৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, সর্বনিম্ন নিচ্ছে ইংরেজিতে অনার্স ১ লাখ ৫০০ টাকা।
আরও পড়ুন: একই বিষয়ে পড়াশোনা করেও টিউশন ফি ভিন্ন
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি নেয় ১১ লোখ ১০ হাজার টাকা; সবচেয়ে কম অর্থনীতিতে অনার্স ৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা। সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটিতে সর্বোচ্চ ফি বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স ৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা; কম লাগে বিএসএস ইন সোশ্যাল অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ পড়তে– ২ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি) বেশি ফি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (সিএসসি)– ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। আর কম নেওয়া হয় সমাজবিজ্ঞানে পড়তে– ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে সর্বোচ্চ ফি ৫ বছর মেয়াদি আর্কিটেকচারে– ১০ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা। আর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বনিম্ন টাকা লাগে চার বছর মেয়াদি সিএসসি পড়তে– ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি) বেশি নেয় ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (ট্রিপল ই)– ৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। কম নেয় সাংবাদিকতা পড়তে– ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: টিউশন ফি আদায়ে বেপরোয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হতাশ অভিভাবকরা
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে সবচেয়ে বেশি ফি নেওয়া হয় ব্যাচেলর অব ফার্মাসি (বি ফার্ম) পড়তে– ৯ লাখ ৮১ হাজার ১২০ টাকা। আর সবচেয়ে কম ব্যাচেলর অব পিপিএইচএস ৪ লাখ ৩০ হাজার ৬২০ টাকা। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক সর্বোচ্চ ফি নেয় আর্কিটেকচারে ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা। আর সবচেয়ে কম ইংরেজিতে অনার্স পড়তে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
এছাড়া বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থাও প্রায় কাছাকাছি। সেখানে দেখা গেছে, প্রায় সবকটিতেই উচ্চ হারে ফি নেওয়া হচ্ছে। সু-স্পষ্ট নীতিমালার অভাবে এমন পরিস্থিতি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৩ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি, টিউশন ফি নির্ধারণের বিষয়ে তৎকালীন ইউজিসি চেয়ারম্যান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি নীতিমালার খসড়া দিলেও অদৃশ্য কারণে দীর্ঘ ১০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ওই নীতিমালা।
অবশ্য চলতি বছরের শুরুতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘টিউশন ফি’ ‘যৌক্তিক পর্যায়ে’ রাখতে একটি নীতিমালা করার উদ্যোগের কথা সংসদকে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এজন্য সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি কাঠামো সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এই কাজ শেষ হলেই সরকার সিদ্ধান্ত জানাবে।
সংসদে শিক্ষামন্ত্রী জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৯ (৪) ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে ন্যূনতম তিন শতাংশ মেধাবী অথচ দরিদ্র শিক্ষার্থীকে ফি ছাড়াই পড়তে দেওয়ার বিধান আছে। এ কারণে মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীরা স্বল্প খরচে লেখাপড়া করতে পারছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যে নীতিমালা আছে তা পর্যাপ্ত নয়। তাছাড়া কোন বিশ্ববিদ্যালয় কত ফি নেবে সেটা নিজেরাই নির্ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই। যদি বেসরকারিতে গলাকাটা ফি নেয় তবে শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়বে না।