প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা

সাত বছরেও কার্যকর হয়নি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, নামেই দ্বিতীয় শ্রেণি

পদমর্যাদা উন্নতির পর সাত বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না
পদমর্যাদা উন্নতির পর সাত বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না  © ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। পদমর্যাদা উন্নতির পর সাত বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তারা দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে নামেই রয়ে গেছেন তারা রাষ্ট্রের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি পদমর্যাদা ও জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে বেতনের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীতের সাত বছরেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষক সমাজ চরম হতাশ। পাঠদানের ওপরে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

পড়ুন: প্রাথমিকের শিক্ষক হতে চাইলে যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন

বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ ঢাকার গেন্ডারিয়ার মহিলা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজসহ ৪৫ জন হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি সভাপতি রিয়াজ পারভেজ জানান, মন্ত্রণালয়ের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে প্রধান শিক্ষকদের পক্ষ থেকে রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের শুনানি করে গত ২০১৯ সালের ৫ মার্চ আদালত রুল জারি করেন। সেই রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেড করাসহ গেজেটেড পদমর্যাদা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

পড়ুন: প্রাথমিকের শিক্ষক মারা গেলে সন্তানের দায়িত্ব নেবে ট্রাস্ট

তবুও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনীহা ও গাফিলতিতে দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা কার্যকর হয়নি। গেজেট জারি হয়নি পদমর্যাদা ও বেতন স্কেলের। তাদের বেতন আগের কাঠামোতেই রয়েছে। এতে প্রধান শিক্ষকরা চরম ক্ষুব্ধ।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ক ও উত্তর পূর্ব চর লামছিপাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীলিপ কুমার মণ্ডল বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সহকারী শিক্ষকদের ও প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে লাখ লাখ শিক্ষকের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পড়ুন: প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে ‘কোটা’ থাকছে না

এদিকে, হাইকোর্টের নির্দেশনার পরে সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। আপিল বিভাগের প্রথম শুনানি আজ রোববার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, দশম গ্রেডে বেতন চেয়ে প্রধান শিক্ষকরা উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন। আদালত রায় দিয়েছেন। রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ, অর্থাৎ অর্থ মন্ত্রণালয় আপিল করেছে। শুনানি শেষে আদালত যা রায় দেবেন, তাই বাস্তবায়িত হবে।

পড়ুন: প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের আবেদন করবেন যেভাবে

বর্তমানে প্রধান শিক্ষক বেতন পান ১১তম গ্রেডে আর সহকারী প্রধান শিক্ষক বেতন পান ১৪তম গ্রেডে। সহকারী শিক্ষকদের দাবি, প্রধান শিক্ষকের পরই তাদের পদ। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের সাথে তাদের বেতন গ্রেডের ব্যবধান তিন ধাপের। এটি একটি চরম বৈষম্য বলে মনে করেন তারা। তাদের দাবি, প্রধান শিক্ষকের গ্রেড ১০ম ও সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড ১১তম করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ