অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার

কাগজে আঁকা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ
কাগজে আঁকা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ  © ফাইল ফটো

ভাষা শহীদদের স্মরণের স্মৃতিচিহ্ন শহীদ মিনার। অথচ শহীদদের স্মৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ দেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দেওয়ার জন্য নেই শহীদ মিনার। ফলে চেতনার উৎস ভাষার স্মৃতির পরিচয় থেকে পিছিয়ে পড়ছে শিশুরা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬২০টি। আর শহীদ মিনার রয়েছে ১৪ হাজার ৯১৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ডিপিই’র বার্ষিক এ প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, দেশের বেশকিছু জেলার শতকরা ৯০ ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার নেই।

চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, আট উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এক হাজার ১৫৬টি। এরমধ্যে এক হাজার ৯ বিদ্যালয়েই নেই শহীদ মিনার। সিলেটে সিটি করপোরেশন ও জেলায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিদ্যালয় থাকলেও শহীদ মিনার আছে মাত্র ১৯৩টিতে। মানিকগঞ্জ জেলায় মোট ৬৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫০৩টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তাছাড়া দেশের অধিকাংশ জেলার চিত্র এমনই।

ফলে প্রতিবারের মতো এবারও একুশে ফেব্রুয়ারিতে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাগজে আঁকা ছবি, বাঁশ, কলা গাছ অথবা ইট দিয়ে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানায়।

রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়ারীতে অবস্থিত ইসলামী ইউপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও নেই কোনো শহীদ মিনার। বিদ্যালয়টির এক শিক্ষক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, জায়গা স্বল্পতার কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি সেখানে। তবে শহীদদেরকে স্মরণ করতে এবং মাতৃভাষা দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কর্কশীট দিয়ে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে। তারপর সেটিকে স্কুলের বারান্দায় রেখে দিবসটি পালন করা হয়। তবে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের বিষয়েও ভাবছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার শ্রীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা খানম গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় ২১ ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারি না। বইয়ের পাতায় শহীদ মিনার থাকলেও বাস্তবে দেখতে না পেয়ে শিক্ষার্থীদের এর প্রতি আগ্রহ জন্মায় না। বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলে ছোটবেলা থেকেই দেশপ্রেম জাগ্রত হতো। বরাদ্দ না থাকায় বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।

তবে শহীদ মিনার স্থাপন না করার বিষয়কে সদিচ্ছার অভাব বলে মন্তব্য করেন সচেতন মহল। তাদের মতে, বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষকের যৌথ উদ্যোগেও নির্মাণ করা যায় শহীদ মিনার। কিন্তু উদ্যোগ না নেয়ায় বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে তা নির্মাণ সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, স্কুল প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার থাকলে কৌতূহলবশত অনেক কিছুই শিক্ষার্থীরা জানতে পারে। এতে ভাষাশহীদদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান বাড়ে। একটি শহীদ মিনার বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে থাকলে ভাষা শহীদদের অজানা সব তথ্য জানার আগ্রহ বাড়ে।

বাঙালির জাতীয় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ভাষা দিবস। এ দিবস সম্পর্কে না জানা মানে দেশের ইতিহাস না জানা। হাজার বছরের ইতিহাসের মধ্যে ভাষা আন্দোলন অন্যতম। এ আন্দোলনের যে গৌরবগাঁথা, সেই ত্যাগ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে ও এর তাৎপর্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনারের প্রয়োজনীয়তার কথা জোর দিয়ে বলেছেন ভাষাসৈনিক ও শিক্ষাবিদেরা।


সর্বশেষ সংবাদ