করোনায় মানবেতর দিন পার করছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা
- সৌম্য সরকার, বেরোবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২০, ০৮:২৫ PM , আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২০, ০৯:১৮ PM
বিশ্বব্যাপী চলছে করোনার মহামারী। করোনার লকডাউনে শুরু থেকেই বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন সব শ্রেণী পেশার মানুষ। বিশেষ করে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারী স্কুল কলেজগুলোতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
জানা যায়, বেসরকারী কিন্ডারগার্টেনগুলো চলে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের মাধ্যমে। স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন তুলতে পারছেন না প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। যার ফলে শিক্ষক এবং কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রয়েছে গত চার মাস।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময় নন এমপিওভুক্ত শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও কাওমি মাদ্রাসার শিক্ষকসহ নানা পেশাজীবীর মানুষ সরকারি সহায়তা পেলেও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা কোন ধরণের সহায়তা পাননি। ফলে সারা দেশের ন্যায় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রায় অর্ধশত কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী এখন কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৪৫টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। কিন্ডারগার্টেনের লেখাপড়ার সুখ্যাতি থাকায় সচেতন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এ স্কুলগুলোতে লেখাপড়া করাতে বেশি আগ্রহী হন। ব্যক্তি মালিকানায় বা সমিতি দ্বারা পরিচালিত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের বেতন এবং প্রতিষ্ঠানে শ্রেণী পাঠদানের বাইরে প্রাইভেট বা কোচিং করার টাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করেন।
পীরগঞ্জ পৌর শহরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রি-ক্যাডেট স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, না পারছি রিলিফের জন্য কাউকে বলতে, না পারছি পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে। করোনাকালীন সময়ে কি যে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছি আল্লাহই ভালো জানেন।
পৌর শহরের গ্রীন প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহেরুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি ভবন ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করা হয়। দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বেতন আদায় হচ্ছে না। তারপরেও ধার দেনা করে ভবন ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল ঠিকই নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। তবে শিক্ষক কর্মচারিদের বেতন দিতে পারছিনা।
উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি ও ফুঁলকুড়ি প্রি-ক্যাডেট কেজি স্কুলের অধ্যক্ষ মহসিন আলী জানান, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা নিয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সরকারি বেসরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মত এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষকরাও সম্মানীয়।
মহসিন আলী বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মরত অধিকাংশ শিক্ষক উচ্চ শিক্ষিত হলেও বেশির ভাগ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা না পারছেন অন্যের কাছে সহযোগিতা চাইতে, না পারছেন পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে। কর্মহীন হয়ে পড়ায় বর্তমানে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারিদের সরকারি সাহয়তা বা প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনাভূক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান।
পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আখতারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি মানবিক। সরকারের উচ্চ মহলে এ ব্যাপারে কথা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদ থেকে তাদের যতটুকু সম্ভব সহায়তা করা হবে।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক কর্মচারিদের সরকারি সাহয়তা বা প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনাভূক্ত দাবীর সাথে একমত প্রকাশ করে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান জাহিদ বলেন, ব্যক্তি মালিকানায় বা সমিতি দ্বারা পরিচালিত হলেও মানবিক বিবেচনায় তাদের এটা প্রাপ্য।