করোনায় চাঁদাবাজির শিকার প্রাথমিক শিক্ষকরা

বৈশ্বিক করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত জনজীবন। এসময় আক্রান্তদের সহায়তার নামে চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। মাঠপর্যায়ে নির্বিচারে চলছে চাঁদাবাজি। কোথাও কোথাও এর সঙ্গে জড়িত উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও। অনেক উপজেলায় শিক্ষকদের মাথাপিছু ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয় উপপরিচালকের টেলিফোনিক নির্দেশের উল্লেখ করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা (ডিপিইও) এ-সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে। এ চিঠির ৫নং কলামের সুযোগ নিয়ে অনেক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষকদের কাছ থকে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে বাধ্য করছেন।

এদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা পিয়নদের সহকারী শিক্ষকদের বাড়িতে পাঠিয়ে এই চাঁদা আদায় করাচ্ছেন। আবার অনেক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইউএনওর ত্রাণ তহবিলের জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ টাকা বেতন থেকে কেটে নিচ্ছেন।

মাঠপর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষকরা জানান, মাত্র কয়েকদিন আগে তারা বৈশাখী ভাতার ২ শতাংশ হিসেবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক নেতা ও কর্মকর্তাদের আলোচনার পর স্বেচ্ছায় এই অনুদান দেওয়া হয়। এখন আবারও করোনা আক্রান্তদের ত্রাণের জন্য টাকা দিতে বাধ্য করায় শত শত শিক্ষক অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এদিকে চিঠিতে বিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ থাকায় প্রধান শিক্ষকরা টাকা কালেকশন করতে উঠেপড়ে লেগেছেন।

কুমিল্লা জেলার ডিপিইওর চিঠি পাওয়ার পর দাউদকান্দি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে ওই উপজেলায় শিক্ষকপ্রতি ৫০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হচ্ছে বলে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে- কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে শিক্ষকপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দী বাপ্পী বলেন, উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথসভায় সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শিক্ষকরা ৫০০ করে টাকা দেবেন। যারা স্বেচ্ছায় দেবেন, তাদেরটাই নেওয়া হবে। এ দিয়ে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্রদের জন্য স্থানীয় একটি তহবিল করা হবে। তবে এখনও কোনো শিক্ষকের কাছ থেকেই কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মৌখিক নির্দেশে শিক্ষা কর্মকর্তা সাধারণ শিক্ষকদের থেকে এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ টাকা কেটে রেখেছেন। ইউএনওর ত্রাণ বিলির জন্য এই টাকা কেটে রাখা হয় বলে শিক্ষকদের জানানো হয়েছে। ওই উপজেলার শিক্ষকরা জানান, করোনোর এই দুর্দিনে নিজ এলাকার প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজনকেও তাদের সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা করতে হচ্ছে।

আশাশুনির ইউএনও মীর আলিফ রেজা সোমবার বলেন, এক দিনের বেতন নেওয়ার কথা সত্য। আর এটি কেবল প্রাথমিক শিক্ষক নন, উপজেলার সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং মেম্বাররাও দিয়েছেন। চেয়ারম্যানরা দিয়েছেন এক মাসের সম্মানী। তবে কোনো জোরজবরদস্তি করা হয়নি। যিনি দিয়েছেন নিজের ইচ্ছায়ই দিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ