শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা: বিদ্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ

  © সংগৃহীত

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় জয়চন্ডী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরেফিন তায়েফের নেতৃত্বে ২ স্কুলছাত্রের ওপর হামলার প্রতিবাদে থানায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আসামিকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে মাঠে অবস্থান নেয় এবং ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করতে থাকে।

খবর পেয়ে কুলাউড়া থানা পুলিশের একটি দল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। পরে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইয়ারদৌস হাসান সরেজমিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যায়।

এ ঘটনায় গতকাল বুধবার রাতে দিলদারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুপিয়া বেগম বাদী হয়ে আরেফিন তায়েফকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে উপজেলার দিলদারপুর উচ্চ বিদ্যালয় ছুটির পর জয়চন্ডী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরেফিন তায়েফের নেতৃত্বে ৮-৯ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ২ স্কুলছাত্রের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাদের বেধড়ক মারপিটের কারণে বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মিরজান মিয়া ও জামিল আহমদ আহত হয়। আহত ২ স্কুলছাত্র কুলাউড়া হাসপাতালে তিন দিন চিকিৎসা নিয়ে বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরেছেন।

রবিবার বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র জাহিদ, মাজহার, নাঈম, শাফি, মিরজানে সাথে অপর সহপাঠী শোভনের ক্লাসের ব্রেঞ্চে বসা নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে শোভন মিরর্জান ও তার সহপাঠীদের বলে তার চাচাতো ভাই আরেফিন তায়েফকে দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষ শুনলে ছাত্রদের অভিভাবকদের বিদ্যালয়ে ডেকে এনে ঘটনার মীমাংসা করে দেন। মীমাংসা হলেও পরদিন নবম শ্রেণির ছাত্র শোভন বিষয়টি তার চাচাই ভাই এলাকার চিহ্নিত বখাটে ছাত্রলীগ নেতা আরেফিন তায়েফকে জানায়।

তায়েফ বিষয়টি শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। বিদ্যালয় ছুটির নবম শ্রেণির ছাত্র মিরজান, জামিলসহ অন্যান্য সহপাঠী একত্রে বের হয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দাঁড়ায়। এ সময় আরেফিন তায়েফের নেতৃত্বে ৪-৫টি মোটরসাইকেলযোগে ৮-৯ জন বহিরাগত বখাটে শিক্ষার্থী মিরজান ও জামিলের ওপর এলোপাতাড়িভাবে হামলা চালায়। আরেফিন তায়েফের হাতে থাকা লোহার রডের আঘাতে ছাত্র মিরজানের ডান পায়ের হাঁটুর নিচে গোড়ালী পর্যন্ত গুরুতর জখম হয়। এবং ছাত্র জামিলের পিটের মেরুদণ্ডে আঘাত প্রাপ্ত হয়। শিক্ষার্থীদের চিৎকার শুনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তাদের উদ্ধার করতে গেলে আরেফিন তায়েফ তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

এর আগে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে সোমবার বিদ্যালয়ে হামলাকারীদের উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। হামলাকারী ৯ জনের মধ্যে রিপন, শোভন, রাহিদ, লিমন, পলাশ ও মাছুম বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে মুচলেকা দিলে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি শেষ হয়। কিন্তু হামলার মূলহোতা জয়চন্ডী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরেফিন তায়েফ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ডাকে সাড়া দেয়নি।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু বলেন, হামলার মূলহোতা আরেফিন তায়েফকে বুধবার বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো। সে উপস্থিত না হলে তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইয়ারদৌস হাসান বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আগামী দুই দিনের ভেতরে আসামীকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন বন্ধ করে ক্লাসে ফিরে যায়। এ সময় থানা পুলিশের পক্ষ থেকে দেড় হাজার টাকার চকলেট শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়।


সর্বশেষ সংবাদ