পড়াশোনার পাশাপাশি নামাজ শেখানো হয় যে বিদ্যালয়ে

নলভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নামাজ শিখছেন
নলভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নামাজ শিখছেন

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নামাজ শেখানো হয়। সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে নামাজ আদায়ের নিয়ম শেখানো হয় বিদ্যালয়টিতে। শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে নামাজ শিক্ষা দেন বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা।

বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা জানান, এ বিদ্যালয়ে হাতে-কলমে নামাজ শিক্ষার বিষয়টি নিয়মিত চর্চা হয়। তবে বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।

বিদ্যালয়টির ধর্মশিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক জানান, এ জন্য কোনো শিশুকে জোর করা হয় না। যারা স্বেচ্ছায় নামাজ শিখতে চায়, তাদের নিয়েই জামাতে নামাজ আদায় করা হয়। এ ছাড়া ক্লাসের আলোচনায় শিশুদের নৈতিক শিক্ষাও দেয়া হয়।

তিন বছর আগে থেকেই বিষয়টি চালু করা হয় বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফিজুর রহমান। তবে কিছু দিন বন্ধ থাকার পর চলতি মাস থেকে ফের চালু হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টিতে নামাজ শিক্ষা নামে একটি অধ্যায় আছে। এই অধ্যায়টি পড়ানোর সময় আমাদের মনে হয়েছিল, বাচ্চাদের পাঠদানের পাশাপাশি নামাজ কীভাবে পড়তে হয় তা বাস্তবে শেখাতে পারলে আরও ভালো হয়। এ কথা চিন্তা করেই শিক্ষকরা শিশুদের নিয়ে জোহরের নামাজ আদায় করেন। আর তাদের ওজুসহ নামাজ আদায়ের নিয়ম শেখান।

নামাজ আদায়কারী পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, আগে সঠিক ও শুদ্ধভাবে নামাজ পড়া জানতাম না। স্কুলে স্যাররা নামাজ পড়ার নিয়ম শিখিয়েছেন আমাদের। এখন বাড়িতে গিয়ে একা একাই নামাজ পড়তে পারি।

এমন উদ্যোগকে স্থানীয়রাসহ স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবকরাও। তারা জানান, অনেক বড়রাও ভুলভাবে নামাজ আদায় করেন। নলভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিশুদের যে নামাজ শিক্ষা দিচ্ছেন, এটি চমৎকার উদ্যোগ। তা ছাড়া বিদ্যালয়টি থেকে স্থানীয় মসজিদ একটু দূরে। তাই বিদ্যালয়ের মাঠে এসব কোমলমতিদের নিয়ে নামাজ আদায় করাটা খুব প্রশংসনীয় ও বুদ্ধিদীপ্ত কাজ।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফিজুর রহমান জানান, ১৯৪৪ সালে ৯৯ শতক জমির ওপর নলভাঙ্গা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৭৩ সালে সেটি সরকারি করা হয়। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে ১৭৩ জন শিক্ষার্থীকে মাত্র পাঁচজন শিক্ষক দিয়ে পড়ানো হচ্ছে। বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা মাত্র তিনটি বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, মাত্র তিনটি শ্রেণীকক্ষ ও একটি ছোট অফিস-কক্ষ নিয়ে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। নতুন ভবনের জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু এখনো সফল হতে পারিনি। শিশুদের নিরাপত্তার জন্য কোনো সীমানা প্রাচীরও নেই। এটা খুবই জরুরি।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার বানু বলেন, বিষয়টা আমি জানা ছিল না। আজ জানলাম, সেখানে শিশুদের পাঠদানের পাশাপাশি নামাজ কীভাবে পড়তে হয় সেটা বাস্তবে শেখানো হচ্ছে। এটা মহৎ উদ্যোগ।


সর্বশেষ সংবাদ