৭ দিনের মধ্যে দাবি না মানলে বৃহত্তর আন্দোলন প্রাথমিক শিক্ষকদের
- এম টি রহমান
- প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০১৯, ১১:৪২ AM , আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৯, ০২:৪২ PM
১১তম গ্রেডে বেতন প্রদান ও বৈষম্য নিরসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। তবে এখনো এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ তাদের। এজন্য চলতি সপ্তাহ সময় দিয়ে আগামী সপ্তাহে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি।
ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত প্রায় একমাস ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৃথকভাবে মানববন্ধন করে দাবি জানিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এছাড়া গত ১৪ মার্চ দেশব্যাপী একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। এরপরও দাবি আদায় না হওয়ায় বৃহৎ কর্মসূচির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা সর্বশেষ যেটা জানতে পেরেছি তা হল আমাদের দাবিকৃত ১১তম গ্রেড নিয়ে এখনো তেমন কোন কাজ শুরু করেনি। তবে ২০ মার্চ ঢাকায় একটি ওয়ার্কশপ হয়েছে। সেখানে সরকারের সিনিয়র সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেগুলো এখনো প্রকাশ করা হয়নি।’
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করার আহবান জানিয়ে এ শিক্ষক নেতা বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে আমরা এ দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো তার কিছুই হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘স্বল্প সময়ের মধ্যে দাবি মানার আশ্বাস মন্ত্রণালয় আমাদেরকে দিয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। এরমধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’ সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে অনশন ও বিক্ষোভের মতো কর্মসূচিন দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী করণীয় কি হতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে সমমনা অন্য শিক্ষক সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তারা আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’
এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির পালন করছে আন্দোলনরত নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। দেশের নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে এমপিও’র দাবীতে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘তাদের দাবিও যৌক্তিক। আমাদের মতোই তারাও দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে, সরকার তা মেনে নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে। কিন্তু এখনো সে ব্যপারে কোন অগ্রগতি হয়নি।’ শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা ও শিক্ষকদের মধ্যে মর্যাদার ভারসাম্য আনতে তাদের দাবিও মেনে নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
অবশ্য সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, সহকারী শিক্ষকদের বঞ্চিত করে বেতন আপগ্রেডের কোনো ঘোষণা আসবে না। এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আরো পড়ুন: ১১তম গ্রেড যৌক্তিক, ২০ মার্চের মধ্যে সমাধান: শিক্ষকদের সচিব
এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। সে সময়ও দাবি ছিল, প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে বেতন স্কেল নির্ধারণ। বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের উদ্যাগে আয়োজিত ওই অনশন কর্মসূচিতে জোটের অধীনে থাকা ১০টি সংগঠনের শিক্ষকরা অংশ নিয়েছিলেন।
বৈষম্য নিরসনে চার দফা দাবি: বেতন বৈষমস্য দূর করতে ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কাছে চার দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক মহাজোট। দাবিগুলো হচ্ছে- সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন পুনঃনির্ধারণ, নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে পুরুষ ও মহিলা- উভয়ের ক্ষেত্রেই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ডিগ্রী নির্ধারণ, সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে সহাকারী শিক্ষক থেকে পদোন্নতির ব্যবস্থা এবং সিএনডি/ডিপিএড ও বিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতন উন্নীত স্কেলে বেতন নির্ধারণ। প্রাথমিকে মানুষ গড়ার কারিগর তথা সহাকারী শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় অবিলম্বে এই দাবিগুলো কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তারা।