উপজেলার ৯৪ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭১ টিতেই নেই খেলার মাঠ
নেত্রকোনার হাওর উপজেলা মদন। শিশু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিশ্চিত করতে পর্যায়ক্রমে উপজেলাটিতে ৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরমধ্যে ৭১টি বিদ্যালয়ে নেই কোনো খেলার মাঠ। প্রতিনিয়তে শিক্ষাবিমুখ হচ্ছে উপজেলার শিশু শিক্ষার্থীরা। গত ৩ বছরে এ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১ হাজার ৬৫৫ জন শিক্ষার্থী ঝরে গেছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার ( ভারপ্রাপ্ত) তারিক সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, ৯৪ টি সরকারি বিদ্যালয়ে ২০২০ সালে ১৫ হাজার ৬৫৩ জন শিক্ষার্থী ছিল। যেখানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩ হাজার ৯৯৮ জন। সেই হিসেবে সরকারি প্রাথমিকে ১ হাজার ৬৫৫ জন শিক্ষার্থী ঝরে গেছে।
এ বছর জয়পাশা শহীদ মফিজ স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫৬ জন, মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০ জন, হাসানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৯০ জন, গঙ্গানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩০ জন, বাড়িবাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৪ জন শিক্ষার্থী চলে গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকগণ। এমন প্রায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা ঝরে যাচ্ছে বা পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজে ঢুকে যাচ্ছে।
মদন উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সব কটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য মিড ডে মিল চালু করা এবং বিনামূল্যে জুতা সহ স্কুল ড্রেস দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করলে শিক্ষার্থী ঝরা রোধ করা যেতে পারে।
এদিকে সরেজমিনে বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান বেদখল করে রেখেছেন। তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বেদখল হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দিতে পারেননি।
শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঠ, ক্রীড়া, খেলাধুলা ও শরীরচর্চার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ উল্লেখ থাকলেও উপজেলার ৭১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই।
আরও পড়ুন: ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ ব্যালটে সিল মারার ঘটনায় তদন্ত কমিটি
এদিকে উপজেলার ৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১টি প্রধান শিক্ষক ও ৭জন সহকারী শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য রয়েছে বলে জানিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস। তবে কমে নাগাদ এ পোস্টে নিয়োগ দেওয়া হবে তা জান যায়নি।
মদন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এটিএম কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের সংসদ সদস্যকে উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যার সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। সমস্যার সমাধানের কাজ শুরু করেছেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তারিক সালাউদ্দিন বলেন, প্রাথমিকে শিক্ষার্থী করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গেছে। আমরাও অভিভাবকদের নিয়ে উঠান বৈঠক, মাঠ সমাবেশ, মা সমাবেশ করে ওই শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি বেদখল প্রসঙ্গে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, যে-সব বিদ্যালয়ের জমি নিয়ে সমস্যা রয়েছে সেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুতই সমস্যা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হবে।