দীর্ঘ মামলা লড়াই শেষে ২০ বছর পর নিজের গড়া বিদ্যালয়ে যোগদান
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ১১:০৪ AM , আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ১১:০৮ AM
টানা ২০ বছর মামলার পিছনে লড়াই করে অবশেষে নিজ হাতে গড়া বিদ্যালয়ে আবারও শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন আকবর হোসেন। পঞ্চগড় সদর উপজেলার নয়নীবুরুজ দীঘলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯২ সালে তার নিজ হাতে গড়া। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে যোগদান করেন এই শিক্ষক।
আকবর হোসেনের পরিবার জানায়, দীঘলগ্রামে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ১৯৯২ সালে নয়নীবুরুজ দীঘলগ্রাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন আকবর আলী। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। তার অনেক আগেই সভাপতি হবিবর রহমানের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় আকবর হোসেন শিকার হন ষড়যন্ত্রের। ২০০১ সালে তার স্ত্রীর সাথে বিরোধের একটি মামলায় তিনি ৩ মাস কারাগারে থাকতে হয় তাকে। পরে সমঝোতা হওয়ায় জামিনে মুক্তি পান তিনি। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর বিদ্যালয়ের সভাপতি হবিবর রহমান প্রধান শিক্ষক আকবর হোসেনকে আর বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেননি। এভাবে চলে যায় কয়েক বছর।
২০০৪ সালে আদালতে আদেশাত্মক নিষেধাজ্ঞার মামলা করেন আকবর। মামলায় আদালত আকবরকে স্বপদে বহাল ও তার বকেয়া বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেন। এদিকে আকবরকে সরিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্টরা সভাপতির ভাতিজা বৌ আয়েশা সিদ্দিকাকে নিয়োগ দেন। এরপর এই মামলা গড়িয়েছে উচ্চ আদালত পর্যন্ত। চলেছে রায় আর পাল্টা আপিল।
সবশেষ ২০২২ সালের ১৮ মে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন এবং আয়েশা সিদ্দিকার নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া আয়েশা সিদ্দিকাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কিন্তু আকবরকে যোগদান করাতে টানবাহানা শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তারা তাকে ঘুরাতে শুরু করে। উপায় না পেয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে পঞ্চগড় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি জারি মামলা করেন তিনি।
এরপর আকবর আলীকে যোগদান করানোর আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় আদালত গত ২৯ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর তড়িঘড়ি করে বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আকবর হোসেনকে যোগদান করিয়ে বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
আকবর হোসেন জানান, এই মামলার পেছনে আমার সবকিছু শেষ করে ফেলেছি। ছেলে দুইটাকেও ভালো করে লেখাপড়া করাতে পারিনি। ২০ বছর ধরে আমি সংগ্রাম করছি। চরম অভাবে দিন পার করেছি। তবুও ন্যায় বিচারের আশায় বছরের পর বছর ঘুরেছি। সভাপতি হবিবর রহমান, এটিইও আকবর আলী, জিন্নাত আলী ও টিইও রুস্তম আলী যোগসাজসে আমাকে বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে আয়েশা সিদ্দিকাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছিল। আজ ২০ বছর পরে আদালতের নির্দেশে আমাকে আমার পদ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন আমাকে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলোতে আর যেন হয়রানি না করা হয় সেই দাবি জানাই। এর সাথে আমি স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করি।
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক আজম আলী প্রধান বলেন, আমরা একসঙ্গে শিক্ষকতা শুরু করি। এই বিদ্যালয়ের জন্য তিনি অনেক কষ্ট করেছেন। তারপর দীর্ঘ ২০ বছর আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরেছেন। আজ তিনি আবার যোগদান করায় আমরা খুবই আনন্দিত।
আকবর আলীর স্ত্রী জোসনা আক্তার জানান, আমার স্বামী নিজেই এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। ওই সময় এখানে কোন বিদ্যালয় ছিলো না। কিন্তু আমার স্বামীকে ষড়যন্ত্র করে বহিষ্কার করা হয়। মামলা চালাতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আজ আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই।