পাশেই বিদ্যালয় ভবন তবুও খোলা আকাশের নিচে চলে ১০৭ শিক্ষার্থীর পাঠদান
- জেলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০৫:৩৬ PM , আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০৬:১১ PM
দাড়িঁয়ে আছে একতলা বিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন। আপাতদৃষ্টিতে ঠিকঠাক মনে হলেও বিদ্যালয় ভবনের কিছুটা দূরে খোলা আকোশের নিচে পাঠদান চলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। ঝুকিপূর্ণ ভবন মেরামত না করেই গত ছয় মাস ধরে মাঠে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে ১০৭ শিক্ষার্থীর। ঘটনাটি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার শাখারুঞ্জ চৌধুরীপাড়া আলিয়া তফিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণার পর খোলা আকাশের নিচে পাঠদান চলছে শিক্ষার্থীদের। আলাদা কক্ষ না থাকায় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এই ব্যবস্থা নিয়েছেন উপজেলার শাখারুঞ্জ চৌধুরীপাড়া আলিয়া তফিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এতে বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে পাঠদান কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কারণে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান চললেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনেই প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে তাদের। মাঝে মধ্যেই কক্ষের মধ্যে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে।
প্রতিদিন খোলা আকাশের নিচে চেয়ার-টেবিল ও বেঞ্চ আনা-নেওয়া করতে গিয়ে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এছাড়া জরাজীর্ণ টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি অস্থায়ী কক্ষ। সেখানেও নেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস। সেই কক্ষে নেই কোন ফ্যান, নেই কোন আলোর ব্যবস্থা, নেই কোন জানালা, একটি মাত্র দরজা সেটিও ভাঙা। ভবনের ছাদ এবং গ্রেড বিমে দেখা দিয়েছে ফাটল। মাঝেমধ্যেই দেয়াল ও ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। দেবে গেছে ঘরের মেঝেও।
জানা গেছে, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২০০০ সালে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবন নির্মাণের প্রথম থেকে কক্ষ সংকুলান না হওয়ায় দুই শিফটে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হয়। নির্মাণের মাত্র ২২ বছরের মধ্যেই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা করতে না পেরে ঝুঁকি এড়াতে প্রতিদিন ১০৭ জন শিক্ষার্থীর নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে তাদের খোলা মাঠে পাঠদান করছেন পাঁচজন শিক্ষক।
প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোরশেদুল ইসলাম জানায়, বাহিরে খোলা আকাশের নিচে পড়তে খুব কষ্ট হয়। দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া আরেক শিক্ষার্থী সুবর্ণা আক্তার জানায়, খোলা আকাশের নিচে আমাদের ক্লাস করতে খুব সমস্যা হয়। প্রচন্ড গরমে গা-মাথা ঘেমে যায়, বৃষ্টি হলে বই খাতা ভিজে যায়।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, পরিত্যক্ত ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করাচ্ছি। প্রতিদিন ভারী ভারী বেঞ্চ আনা-নেওয়ার করতে গিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। আবার প্রচণ্ড রোদ ও বৃষ্টির দিনে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের পড়ালেখার কার্যক্রম। এছাড়া বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষের সংকট হওয়ায় দুই শিফটে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা বানু বলেন, দুর্ঘটনার আশঙ্কার বিষয়টি জেলা ও উপজেলা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হলে প্রকৌশল বিভাগের উচ্চতর একটি তদন্তদল ভবনটি পরিদর্শন করে। গত ৬ এপ্রিল তারা বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিকে ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এরপর কক্ষ সংকটের কারণে বিদ্যালয় মাঠে সাময়িকভাবে একটি টিনের তৈরি একটি শ্রেণি কক্ষ নির্মাণ করা হলেও গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। আবার একসঙ্গে দুই শ্রেণির ক্লাস এক কক্ষে নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক শাহ বলেন, বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ছয় মাস আগে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অস্থায়ী একটি টিনের তৈরি কক্ষে ও বাহিরে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান চলছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশা করছি, তারা খুব শিগগরিই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য টিন দিয়ে আরেকটি অস্থায়ী শ্রেণি কক্ষ তৈরি করা হবে।