প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলতে মানতে হবে ১৩ নির্দেশনা

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়  © ফাইল ফটো

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে আস্তে আস্তে জীবনযাত্রায় ফিরছে সাধারণ মানুষজন। তারই প্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার দাবি তোলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে মহামারীকালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো চালুর আগে কী কী করতে হবে, তা একটি তালিকা করে দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে কোন খাত থেকে এসবের খরচ জোগানো হবে তাও বলে দিয়ে বুধবার রাতে এক পরিপত্র জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কবে খুলবে, তা এখনও ঠিক না হলেও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিগগিরই ক্লাস শুরুর পক্ষে মত জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে ১৩ নির্দেশনা মেনে বিদ্যালয় খোলার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে মন্ত্রণালয়।

এ সংক্রান্ত পরিপত্রে বলা হয়েছে, “কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বব্যাপী বিদ্যালয়গুলোর ন্যায় বাংলাদেশেও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এর ফলে শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাতসহ শিশুর শিখন যোগ্যতার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা যত বেশি সময় বিদ্যালয়ের বাইরে থাকবে, তাদের বিদ্যালয়ে ফেরার সম্ভাবনা ততই কমে যাবে। তাই জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাশিঘ্র বিদ্যালয় পুনরায় চালু করা অতীব জরুরি।”

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ছুটি বাড়তে বাড়তে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঘোষণা করা আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি এখনও হয়নি বলে সম্প্রতি মত জানিয়েছিল কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকার গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটি।

এক সপ্তাহ আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এরমধ্যেই বিদ্যালয় খোলার আগে পূর্ব প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশক্ষা মন্ত্রণালয়।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, “গত ৩ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় পুনরায় চালুর বিষয়ে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয় এবং তদানুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি৪) আওতায় বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা (স্লিপ) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন গাইডলাইনের আলোকে স্ব স্ব বিদ্যালয় নিজস্ব পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে উক্ত গাইডলাইনের আলোকে বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার পূর্বে পূর্ব প্রস্তুতিমূলক বিবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।”

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ করা ১৩ কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- ক্লাসরুমসহ বিদ্যালয়ের পুরো আঙিনা সর্বদা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও জীবাণুমুক্ত করা; বিদ্যালয়ের সমস্ত আসবাবপত্র সার্বক্ষণিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও জীবাণুমুক্ত করা; শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র ‘ইনফ্রারেড থার্মোমিটার’ স্থানীয়ভাবেকিনে রাখা; সাবান, ব্লিচিং পাউডার ইত্যাদি কিনে রাখা; ওয়াশব্লক ও টয়লেট সার্বক্ষণিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা; হাত ধোয়ার জন্য মগ, জগ ও বালতি কিনে রাখা; অস্থায়ীভাবে হাত ধোয়ার স্থান নির্ধারণ করে হাত ধোয়ার পানি ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য শ্রমিকের যৌক্তিক সেবা ক্রয় (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে); কোভিড-১৯ মেয়াদকালে ইন্টারনেট ডাটা ক্রয় (এ খাতে বরাদ্দ না থাকলে);

বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত স্লিপ ফান্ড থেকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে স্থানীয়ভাবে সাশ্রয়ীমূল্যে উপরে বর্ণিত সামগ্রী বা সেবা কেনা বা সংগ্রহ করা যাবে; কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় পুনরায় চালুর নির্দেশিকার আলোকে স্ব স্ব বিদ্যালয় স্থানীয়ভাবে প্ল্যান গ্রহণ করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে; বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা (স্লিপ) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন গাইডলাইনের অনুবৃত্তিক্রমে এ পরিপত্র জারি করা হল এবং তা উক্ত গাইডলাইনের অংশ হিসেবে গণ্য হবে; উপর্যুক্ত ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারের প্রচলিত বিধি-বিধান অবশ্যই প্রতিপালন করতে হবে।

এসব দিকনির্দেশ করে পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ পরিপত্র বলবৎ থাকবে।


সর্বশেষ সংবাদ