প্রাথমিকের ৯৭ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা, বহিষ্কার ৬৮ জন
২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৩৮ মাসে সিলেটের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৭ জন সহকারী শিক্ষক অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের সবার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইতিমধ্যে অভিযুক্ত ৬৮ জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করেছে কর্তৃপক্ষ। বাকি ২৯ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ ৯৭ শিক্ষকের মধ্যে নারী ৭২ জন এবং ২৫ জন পুরুষ।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা যে বেতন পান, তা দিয়ে পরিবার চালানো খুবই কষ্টসাধ্য। এজন্য অনেককে স্কুলটাইম শেষে টিউশনি করতে হয়। তাই তারা উন্নত জীবন-জীবিকা ও সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে প্রবাসী হচ্ছেন।
৩৮ মাসে ৯৭ জন শিক্ষক কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ৫ ও সিলেট সদরের এক জনসহ ৬ জন শিক্ষক ছুটি নিয়ে বিদেশে গমন করেন। তবে ছুটির নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তারা কর্মস্থলে ফিরে না আসায় তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়। বাকি ৯১ জন কোনো ছুটি না নিয়েই হঠাৎ করে চাকরি থেকে লাপাত্তা হয়ে যান।
জানা গেছে, প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে পরিবারসহ যুক্তরাজ্যে যাওয়া হিড়িক পড়েছিল ২০২২-২৩ সালে। এ সময় প্রাথমিকের অনেক সহকারী শিক্ষক পরিবারসহ যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এছাড়াও বিগত সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনেক শিক্ষক পরিবারসহ চলে গেছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, গত ৩৮ মাসে ৯৭ জন শিক্ষক কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ৫ ও সিলেট সদরের এক জনসহ ৬ জন শিক্ষক ছুটি নিয়ে বিদেশে গমন করেন। তবে ছুটির নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তারা কর্মস্থলে ফিরে না আসায় তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়। বাকি ৯১ জন কোনো ছুটি না নিয়েই হঠাৎ করে চাকরি থেকে লাপাত্তা হয়ে যান।
এর ফলে সিলেট জেলায় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষার মান ও কার্যক্রমে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষকের এ সংকটের প্রভাব পড়ছে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রমেও।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ছাত্রদলের তিন নেতার মৃত্যু
জানা গেছে, ছুটি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথে সবচেয়ে বেশি। এ উপজেলার ১৬ জন। সবচেয়ে কম জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জে। এ দুই উপজেলায় একজন করে দুজন। বাকিরা হলেন, ওসমানীনগরের ১৩, বিয়ানীবাজারে ১১, সদরে ৯, দক্ষিণ সুরমায় ৯, বালাগঞ্জে ৮, কানাইঘাটে ৭, জকিগঞ্জে ৭, গোলাপগঞ্জে ৪, গোয়াইনঘাটে ৩ ও ফেঞ্চুগঞ্জে ২ জন। বাকি ৬ জন ছুটি নিয়ে বিদেশে গেলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফিরে আসেননি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ। তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ৯৭ জন সহকারী শিক্ষককের বিরুদ্ধে তিনি বিভাগীয় মামলা করেন। ইতিমধ্যে সরকারি বিধি মোতাবেক ৬৮ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকিদের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
দ্রুত সিদ্ধান্ত চলে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ শিক্ষকই প্রবাসে অবস্থান করছেন।’ তার মতে, সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রবাসী হওয়ার প্রবণতা সিলেটের বাইরে অন্য জেলায় খুবই কম।