প্রশাসনে প্রথম বুয়েটের তকী, পররাষ্ট্রে ঢাবির রহমত

তকী ফয়সাল ও রহমত আলী।
তকী ফয়সাল ও রহমত আলী।  © তকী ফয়সাল ও রহমত আলী।

এটাই ছিল তাঁদের জীবনের প্রথম চাকরির পরীক্ষা। দুজনেরই লক্ষ্য ছিল বিসিএস। আর সেই পরীক্ষাতেই বাজিমাত করে প্রথম হলেন দুজনই। একজন হলেন প্রশাসন ক্যাডের প্রথম, আরেকজন হলেন পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম।

বলছি ৩৭তম বিসিএসের কথা। গতকাল মঙ্গলবার এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তকী ফয়সাল আর পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রহমত আলী শাকিল।

প্রথমে তকী ফয়সালের কথাই শোনা যাক। বগুড়া জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক আর আজিজুল হক কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। দুটোতেই গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলও করেছেন ভালো। বিসিএস ছাড়া কোথাও চাকরির চেষ্টা করেননি কেন, সে কথা জানালেন তকী। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শুধু একাডেমিক পড়াশোনাকেই প্রাধান্য দিয়েছি। বিএসসি চূড়ান্ত ফলাফলের পর বড় ভাইয়ের উৎসাহে বিসিএসের পড়া শুরু করে দিলাম। বড় ভাই রফি ফয়সালও ৩৪তম বিসিএসে প্রাণিসম্পদ ক্যাডার। তাঁর পরামর্শ বেশি কাজে লেগেছে। তিনি বলে দিয়েছিলেন কীভাবে এগোতে হবে।

ভাইয়ের দেখানো পথে হেঁটে নিজের জীবনে প্রথম চাকরির পরীক্ষা দিলেন তকী ফয়সাল। গতকাল যখন ফলাফল ঘোষণা করা হলো, তখন ফয়সাল নিজেই খুদে বার্তার মাধ্যমে ফলাফল দেখে কিছুটা বিস্মিত হলেন। প্রথম হবেন, সেটা কখনো ভাবেননি। ফলাফলের পর থেকেই আত্মীয় আর বন্ধুরা শুভকামনা জানাতে লাগলেন তকীকে। বাবা মোকাররম হোসেন উত্তরা ব্যাংকের কর্মকর্তা আর মা নাজমুন নাহার গৃহিণী। দুজনই তাঁকে সারাক্ষণ উৎসাহ দিয়ে যেতেন। নিচের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এই ফলাফল হয়েছে বলে জানালেন তকী ফয়সাল।

এই চাকরি কেন করবেন, এর পেছনে যুক্তি দিয়ে তকীর কথা, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে অনেকে দেশের বাইরে চলে যায়। আমি চেয়েছি দেশে থাকতে। দেশের জন্য কাজ করতে। এই জন্য প্রশাসন ক্যাডার একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম। এখানে নানাভাবে দেশের সেবা করার সুযোগ আছে। আর সে জন্যই বেছে নিলাম প্রশাসন ক্যাডারকে।’

যাঁরা বিসিএস দিতে আসছেন, তাঁদের জন্য পরামর্শ দিলেন তকী। বললেন, লেগে থাকতে হবে, একটা গাইডলাইন তৈরি করে এগোতে হবে। তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে। এভাবেই ভালো ফল আসবে।

এবার আসা যাক রহমত আলীর কথায়। পররাষ্ট্র ক্যাডারের মতো আকর্ষণীয় ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন তিনি। গাজীপুর কাওরাইত কে এন উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক আর ঢাকার বিএফ শাহীন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। দুই পরীক্ষাতেই গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান। ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে ভর্তি হবেন। পরীক্ষা দিয়ে সেই সুযোগও পান রহমত আলী।

শুরু থেকেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা নিয়ে মনোযোগী ছিলেন। অনার্স ও মাস্টার্স—দুই পরীক্ষাতেই প্রথম। অনার্সে সিজিপিএ-৪-এর মধ্যে ৩ দশমিক ৯৮ আর মাস্টার্সে ৩ দশমিক ৯৬। তাঁর বিভাগে এই ফলাফলই সবচেয়ে সেরা। ভালো ফলের জন্য পেলেন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক।

রহমত আলী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শেষে বিসিএস পরীক্ষায় প্রস্তুতি নিই। কোথাও কোচিং নয়, নিজে নিজেই পড়তে শুরু করলাম। প্রথম পছন্দ ছিল পররাষ্ট্র ক্যাডার। পরীক্ষা ভালোই হয়েছিল। বিসিএসের ভাইভা বোর্ডে ছিলাম ২৫ মিনিটের মতো। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম। আশা ছিল পররাষ্ট্র বা প্রশাসন ক্যাডারে সুযোগ পাব।’

ফলাফল ঘোষণার পর কেমন হয়েছিল অনুভূতি? রহমত বললেন, ‘ফলাফলের পর যখন দেখলাম পররাষ্ট্র প্রথম হয়েছি, নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না।’

ভালো ফলের জন্য সব সময় পরিবাররে সমর্থন পেয়েছেন রহমত আলী। বললেন,‌‘আমি ভালো কিছু করর বাবা-মায়ের এই আস্থা ছিলে সব সময়। তাঁরা জানতেন, আমি ভালো কিছু করব। তাই চাপ দিতেন না। পড়াশোনার উৎসাহই দিতেন।’

রহমতের বাবা এস এম নাজিম উদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা আর মা শিরিন খাতুন গৃহিণী। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের নিগুয়ারি গ্রামে।

চাকরিজীবনের লক্ষ্য কী? রহমতরে কথা, ‘যেখানে কাজ করব, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। আর দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে চেষ্টা করে যাব।’

যাঁরা নতুন বিসিএস দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য রহমতের পরামর্শ, ‌‘যখন যে বিষয়ে পড়বেন, গভীরে গিয়ে পড়বেন। এতে অনেক ভালো ধারণা তৈরি হবে। এটাই আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’


সর্বশেষ সংবাদ