যুবলীগের সম্মেলন: নেতৃত্ব দৌড়ে এগিয়ে যারা

  © টিডিসি ফটো

সম্প্রতি ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে আলোচনায় রয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ অঙ্গসংগঠন যুবলীগ। সংগঠনটিকে নেতিবাচক ধারা থেকে বের করে ইতিবাচক ব্র্যান্ডে যুক্ত করতে চান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই একদিকে চলছে শুদ্ধি অভিযান অন্যদিকে নতুন নেতৃত্বের খোঁজ। সে লক্ষ্যে দেশের রাজনীতিতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী নিজেই পরিচালনা করছেন শুদ্ধি অভিযান। আগামী ২৩ নভেম্বর সংগঠনটির সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক করে দেয়ায় সবার দৃষ্টি এখন যুবলীগে। রাজনীতি পাড়ার মানুষদের সাথে সাধারণ মানুষদেরও কৌতূহলের শেষ নেই। সংগঠনটির এই ক্রান্তিকালে কারা আসছেন নেতৃত্বে?

আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ  নেতা জানা, যুবলীগ ঢেলে সাজাতে এবার বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন দলটির হাই কমান্ড। আর অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বের প্রতিই আস্থাশীল প্রধানমন্ত্রী। এ প্রেক্ষাপটে কয়েকজন তরুণ নেতার নাম উঠে এসেছে আলোচনায়। যারা একাধারে বিশ্বস্ত, প্রতিশ্রুতিশীল ও মেধাবী। এদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- শেখ মারুফ, ব্যারিস্টার শেখ নাঈম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ তন্ময়, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মাশরাফি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে আস্থা ও যোগ্যতার বিচারে এগিয়ে রয়েছেন শেখ পরিবারের কয়েকজন তরুণ নেতা। মাশরাফি আলোচনায় থাকলেও রাজনৈতিক সংগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় মেজাজ বিবেচনায় তিনি বাদ পড়ে যেতে পারেন। সৎ ও আদর্শিক নেতৃত্ব প্রাধান্য পাবে। 

যুবলীগের বিদ্যমান গঠনতন্ত্রে বয়সের কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এবার বয়সকেও একটা মানদণ্ড ধরা হতে পারে। বিশ্বের শীর্ষ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশেই যুব রাজনৈতিক ইউনিটগুলোর জন্য বয়সের একটা নির্দষ্ট ফ্রেমওয়ার্ক রয়েছে। যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতের কংগ্রেস ও বিজেপির যুব ইউনিট যথাক্রমে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা ও ভারতীয় যুব কংগ্রেস এর বয়স সীমা ১৮-৪০। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুব রাজনৈতিক ইউনিটে বয়সের বাধ্যবাধকতা একই অর্থাৎ ১৮-৪০। কানাডা ও যুক্তরাজ্যে আরও কম। দেশটির প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল লেবার পার্টির যুব সংগঠনের বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়েছে। কানাডায় সেটা আরও কম। তারা জাতিসংঘকে অনুসরণ করে দেশটির যুব রাজনৈতিক সংগঠনের বয়সসীমা নির্ধারণ করেছেন মাত্র ২৫ বছর। বাংলাদেশের যুবনীতি অনুসারে তরুণ বা যুবকদের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। সেখানে ষাটোর্ধ্ব কাউকে যুবলীগের নেতৃত্বে দেখা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল যুবলীগের একাধিক নেতা কর্মী।

আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা বলেন, “বয়স ও ক্লিন ইমেজকে মাপকাঠি ধরা হলে নেতৃত্বের দৌঁড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ব্যারিস্টার শেখ নাঈম। বর্তমানে যুবলীগের কার্যনির্বাহী এ সদস্য তৃণমূলেও তুমুল জনপ্রিয়। যুব লীগের শীর্ষ নেতাদের মাঝে হাতে গোনা যে কয়জন নেতাকে দুর্নীতি ও অপকর্ম কখনও স্পর্শ করতে পারেনি তাদের একজন ব্যারিস্টার শেখ নাঈম। এরপরেই সম্ভাবনার কথা বললে এগিয়ে থাকবেন শেখ মারুফ। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মণির ছোট ভাই হিসেবে সম্ভাবনা সবার থেকে তারই বেশি ছিলো। কিন্তু ৬৭ বছর বয়সী এ নেতাকে আওয়ামী লীগে মূল্যায়ণের কথা ভাবা হচ্ছে। বর্তমানে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ মারুফের সামনে তাই বয়সকেই বাধা হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এছাড়া যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজমের নামও চেয়ারম্যান হিসেবে আলোচনায় এসেছে। মির্জা আজম তৃণমূলে জনপ্রিয় নাম। ৫৭ বছর বয়সী এ নেতা নতুন করে যুবলীগে আসতে পারেন বলে আলোচনা থাকলেও তিনি যুব সংগঠনের ব্যাপারে এখন আগ্রহী নন বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজন।

সরকার ও দলের মধ্যে একটি সুষম পার্থক্য ও দূরত্ব তৈরিতে আগ্রহী শেখ হাসিনা। তাই যারা বর্তমানে সংসদ সদস্য তাদের যুবলীগের শীর্ষপদে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আলোচনায় থাকা ৬ জনের মধ্যে চার জনই সংসদ সদস্য। যারা হলেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ তন্ময়, মির্জা আজম এবং মাশরাফি। তবে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেষ পর্যন্ত কে হবেন সে সিদ্ধান্ত দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে আসন্ন সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে রাজনীতি পাড়ার কৌতূহলী জনতাকে। 


সর্বশেষ সংবাদ