এ পর্যন্ত যে জামায়াত নেতারা নিজ আসন ছাড়লেন
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) আসন সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতার কারণে জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এই ১০টি দলের প্রার্থীদেরকে শতাধিক আসন ছেড়ে দিতে হচ্ছে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এ দলটির।
গতকাল রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) এনসিপি, এলডিপি ও এবি পার্টি এ বলয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হওয়ার পর থেকে জামায়াতের বিভিন্ন আসনের প্রার্থীরা বৃহৎ স্বার্থে ও দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বেচ্ছায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করছেন। তাদের মধ্যকার কেউ কেউ বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এ পর্যন্ত নির্বাচনী মিত্রের একাধিক প্রার্থীর জন্য জামায়াতের হ্যাভিওয়েট কয়েকজন প্রার্থীর আসন ছাড়ার বিষয় প্রকাশ্যে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বপ্রথম রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে ঢাকা-১১ সংসদীয় আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের পক্ষে শুভকামনা জানিয়ে এবং নিজ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ফেসবুকে পোস্ট দেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আতিকুর রহমান।
আরও পড়ুন: এনটিআরসিএ-শিক্ষা মন্ত্রণালয় সভা কাল
এদিন রাতেই কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসন সমঝোতায় এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর আসন থেকে সরে দাঁড়ান জামায়াতের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম শহীদ।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, সংগঠনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম। জনগণের ভালোবাসা ও প্রত্যাশা পূরণ হয়তো করতে পারব না। তবে দেবিদ্বারের মানুষের পাশে থাকতে পারলে নিজকে কৃতজ্ঞ মনে করব।
আজ সোমবার ফেনী- ২ সদর আসন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জুকে ছেড়ে দিয়েছেন জামায়াতের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা কেন্দ্রীয় মজলিসে সূরা সদস্য লিয়াকত আলী ভূঁইয়া।
একই দিনে, রংপুর-৪ (পীরগাছা ও কাউনিয়া) আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন প্রার্থী হওয়ায় তাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এটিএম আজম খান।
এছাড়া, এদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের জন্য ঢাকা-১৩ আসনের প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মো. মোবারক হোসাইন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রার্থিতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মো. আবদুল জব্বার। আস সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান তিনি।
অন্যদিকে, জামায়াতের এমন উদারতার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বগুড়া-৩ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী নূর মোহাম্মদ আবু তাহের বলেছেন, জামায়াতকে এমন কিছু আসন ছেড়ে দিতে হচ্ছে, যার ফলে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর অনেকের শুধু দীর্ঘশ্বাস বাড়বে। তবে এটিই সমঝোতার বাস্তবতা, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তা হাসিমুখে মেনে নেওয়া উচিত। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পোস্টে নূর মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, আসন বণ্টন ইতোমধ্যে মোটামুটি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে মাত্র ১০ থেকে ১২টি আসনে শেষ মুহূর্তের সমন্বয় চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে হাহুতাশ বা উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য দেখা যাচ্ছে, তার কোনো প্রভাব সমঝোতার টেবিলে পড়ছে না। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল বাস্তবতার আলোকে দরকষাকষির মাধ্যমেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি লেখেন, অনেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষা করছেন। এই সমঝোতা দীর্ঘমেয়াদি এবং এর প্রভাব সংসদ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিতব্য সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দৃশ্যমান হবে। যারা বর্তমানে ত্যাগ স্বীকার করছেন, তাদের মাঠে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সামনে আরও সুযোগ আসবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু অ্যাক্টিভিস্টের লেখালেখি নিয়ে হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকে নিজ নিজ দলের স্বার্থে কথা বলছে, যা স্বাভাবিক। তবে অন্য দলকে বিভিন্ন নেতিবাচক ট্যাগ দেওয়া রাজনৈতিক শালীনতার পরিপন্থী। কেউ বঞ্চিত হলে আগে নিজ দলের কাছে জবাবদিহি চাওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও লেখেন, জোট সম্প্রসারিত হওয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় ঘটনা। আগামী সংসদ নির্বাচনের ফলাফল সময়ই বলে দেবে, তবে আজকের দিন রাজনীতির গতিধারা বদলে দেবে নিঃসন্দেহে। এ সময় ১০ দলীয় নির্বাচনী মোর্চাকে অভিনন্দন জানিয়ে সবাইকে একসঙ্গে বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান তিনি।