দ্বন্দ্ব-বিভাজন ঠেকাতে ‘ওয়ান বক্স পলিসি’তে জামায়াতসহ ৮ দলের
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি রাজনৈতিক দল ‘ওয়ান বক্স পলিসি’ অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে ‘ওয়ান বক্স পলিসি’র সিদ্ধান্ত হয়। এই নীতি অনুসারে, জোটের পক্ষ থেকে প্রতিটি নির্বাচনী আসনে একজন করে প্রার্থী দেওয়া হবে। দলগুলো জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট আসনে প্রার্থীর যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা, এবং মাঠপর্যায়ের সাংগঠনিক অবস্থান বিশদভাবে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।
জোট সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর সকল দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবে। এতে করে ভোট ভাগাভাগি কমানো এবং একক প্রার্থীর প্রতি ভোট সমন্বয় করা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক আসনে এক দলের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে সবাই অর্থাৎ প্রত্যেক দলই ওই প্রার্থীর হয়ে প্রচারণা চালাবেন। এই সপ্তাহেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদ্ধতি জোটকে কৌশলগতভাবে শক্তিশালী করতে পারে। ওয়ান বক্স পলিসি জোটের ভিতকে দৃঢ় করবে। বিশেষ করে যেসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র, সেখানে ভোট বিভাজনের সম্ভাবনা কমানো সম্ভব হবে। তবে এর সাফল্য নির্ভর করবে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং মাঠপর্যায়ের সমন্বয়ের ওপর। দলগুলো যদি সঠিকভাবে প্রার্থী বাছাই করতে পারে, তবে তাদের ভোটের শক্তি সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। তবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বা সমঝোতার অভাব হলে ‘ওয়ান বক্স পলিসি’র কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
আরও পড়ুন: স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় সুপারিশপ্রাপ্তরা এমপিও পেলেও আটকা কারিগরি শিক্ষকরা
রাজনীতি বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচনে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে প্রাধান্য পাবে। এর মধ্যে জুলাইয়ের প্রভাব ও ধর্মীয় বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে জামায়াতসহ আট দল ‘ওয়ান বক্স পলিসি’র মাধ্যমে চেষ্টা চালাচ্ছে। আগে ইসলামী মতাদর্শের ভোটাররা বিভক্ত ছিল—যেমন জামায়াত, কওমী ও পীর সাহেব চরমোনাই সমর্থকদের ভোট আলাদা আলাদা হয়ে যেত। এই নীতি যদি দলগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে ভোট বিভাজন কমবে। ফলে প্রার্থীদের বিজয়ের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘ওয়ান বক্স পলিসি’র মাধ্যমে জামায়াত ইসলামী দলগুলোকে এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি বিএনপিকেও ডানপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বাস্তবতায় ডানপন্থি ভোট ব্যাংক ভাগ হয়ে যেতে পারে, যা আট দলের জন্য একটি বাড়তি সুবিধা হিসেবে কাজ করবে।
ড. আইনুল ইসলাম আরও বলেন, বর্তমানে জামায়াতসহ আট দলের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ভালো ঐক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ঐক্য যদি ভবিষ্যতেও বজায় থাকে, তাহলে দলগুলোর প্রার্থীরা ভোটের মাঠে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারবে। তবে সমঝোতা বা ঐক্যে ঘাটতি দেখা দিলে ‘ওয়ান বক্স পলিসি’র ধারণা সফল হবে না।
দলগুলো জানিয়েছে, এই সপ্তাহেই চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে এবং প্রতিটি আসনে জোটের প্রার্থীকে সর্বাত্মক সমর্থন দেওয়া হবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এটি নির্বাচনী মাঠে নতুন কৌশলগত দিক যোগ করতে পারে এবং আসন্ন নির্বাচনি মাঠকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে।
আরও পড়ুন: কুবির ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন ৫৭ হাজার ছাড়াল, সময় শেষ ১৭ ডিসেম্বর
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির মুখপাত্র রাশেদ প্রধান একটি বেসরকারি টেলিভিশনে টকশোতে অংশগ্রহণ করে বলেন, আট দল নিজেদের প্রার্থীদের জরিপ করে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে বাছাই করবে। প্রার্থীগুলোর তালিকা এক টেবিলে রেখে আট দল সিদ্ধান্ত নেবেন ওই আসনে কোন প্রার্থীর জয়ী হয়ে আসার সম্ভাবনা বেশি। সেটি চূড়ান্ত হলে অন্য কোন দল আর ওই আসনে প্রার্থী দিবে না। ওই প্রার্থীর প্রচারণা সবাই করবে
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, এক আসনে আট দলের মনোনীত একজন প্রার্থী থাকবেন। তারা হবেন দেশপ্রেমী এবং ইসলামী ঐক্যের প্রার্থী। দ্রুতই প্রার্থী বাছাই ও চূড়ান্ত করার কাজ শুরু হবে। একই দিনে অনুষ্ঠিত গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের বিজয় নিশ্চিত করতে প্রচার কর্মসূচি চলমান থাকবে।
জামায়াতের লিয়োজোঁ কমিটির সমন্বয়ক হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচনসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে ‘ওয়ান বক্স পলিসি’ বা সমঝোতার ভিত্তিতে এক আসনে এক প্রার্থী দেওয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা ঐকমত্যে পৌঁছতে পারবেন এবং ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এই জোটের অন্য দলগুলো হলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), নেজামে ইসলাম পার্টি, ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।