২৩ নভেম্বর ২০২৫, ২০:২৮

‘প্রশাসন আমাদের কথায় উঠবে’— ভাইরাল সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় যা বললেন শাহজাহান চৌধুরী

শাহজাহান চৌধুরী  © সংগৃহীত

‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয়, যার যার নির্বাচনী এলাকায় প্রশাসনের যারা আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।’ এমন একটি বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এরপরই এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী।

আজ রবিবার (২৩ নভেম্বর) দেশের একটি টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন তিনি। 

শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন হলে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘নির্বাচনী দায়িত্বশীল সম্মেলনের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমার গতকালকে দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াত আমীর ড. শফিকুর রহমান। সেই সম্মেলনে আমি যে বক্তব্যটা রেখেছি সেটা হলো, আমাদের টোটাল প্রশাসন আমাদের দেশের স্বার্থে জাতির স্বার্থে কাজ করবে এবং আমাদের দেশের বর্তমান ইন্টেরিম গভর্নমেন্টের অধীনেই দেশের স্বার্থে পুলিশকে কাজ করতে হবে আমি সেটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম। 

‘কিন্তু আজকে যারা আমার এই খন্ডিত বক্তব্যকে প্রচার করেছেন, আমার মনে হয় বিষয়টা পক্ষান্তরে তারা ফেসিস্টদেরই সহযোগিতা এবং ফেসিস্টদেরকে তারা উস্কানি দিচ্ছেন।’  বলে জানান জামায়াতের এই নেতা। 

আরও পড়ুন : শিবিরের ওপর হামলা করে ছাত্রদল পার পেয়ে যাওয়ার কোনো কারণ দেখছি না: সাদ্দাম

শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমার খন্ডিত বক্তব্য না শুনে পুরো বক্তব্য শুনলেই বুঝতে পারবেন, আমি আমাদের পুলিশ বাহিনী, প্রশাসনসহ সবাইকে দেশপ্রেমিক হওয়ার জন্যই এবং দেশের স্বার্থে কাজ করার জন্যে, জনগণের কথা শোনার জন্যেই, জনগণের দেওয়ালের লিখন শোনার জন্যই আমি বক্তব্যটা রেখেছি। আপনারা জানেন ভারত সবসময় আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। গত ৩৬শে জুলাইয়ের ইন্টেরিম গভর্নরকে ব্যর্থ করার জন্য এমন কোনো কাজ নাই, যেটা তারা করছে না।’ 

তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারত বস্তা বস্তা টাকা বাংলাদেশের মধ্যে বিতরণ করার চেষ্টা করছে। বিগত ১৮ বছরে বাংলাদেশে যে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল, এই অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে বর্তমান সরকার যেই বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে, সেই ভূমিকার সাথে এই দেশের জনগণের সমর্থন রয়েছে এবং জনগণ পাশেই রয়েছে। আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্যেই তাদের সবচেয়ে বেশি দরকার, যে প্রশাসন জনগণেরই প্রশাসন হওয়া দরকার এবং জনগণের স্বার্থেই কাজ করা দরকার। দেশকে রক্ষা করার জন্যই কাজ করা দরকার, জনগণের কথায় শোনা দরকার। আমাদের বলতেই বলেছি সমস্ত জনগণ। এইখানে এই বক্তব্যকে যারা খন্ডিত করে প্রচার করছে, তারা মূলত ফেসিস্টদেরকেই সহযোগিতা করছে, এখন ফ্যাসিস্টদেরকেই উস্কানি দিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার এই জীবনে ৫৪ বছর ধরে দেশ এবং জাতির স্বার্থেই কাজ করেছি এবং গণতান্ত্রিকভাবে ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমাদের জনগণের সেবা করার জন্য কাজ করছি। এই আওয়ামী লীগ সরকার যতবারই এসেছে, তারা আমাকে গ্রেপ্তার করেছে, মামলা দিয়েছে। প্রায় ৭৬টার মতো মামলা রয়েছে। আমাকে নয় বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। আপনারা জানেন আমি প্রায় ৯ বছর কারাগারে ছিলাম, এই ৯ বছরের মধ্যে ৯ বছরই কারাগারে ছিলাম। 

প্রায় ৩ বছরের কাছাকাছি কারাগারে থাকা অবস্থায় আমাকে ১৯ মাস কনডেম সেলের অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা যেখানে থাকে সেখানেই আমাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা আমাকে যতদিন হায়াতে বাঁচায় রাখেন আমি দেশের স্বার্থেই কাজ করব। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্যই কাজ করব। জনগণের কল্যাণের জন্যই কাজ করব। এটাই হচ্ছে জামায়াতে ইসলামের বৈশিষ্ট্য। আমি যতদিন বেঁচে থাকব এই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নিজের জীবন দেব এবং ভারতের যেই আগ্রাসনী চিন্তা এই চিন্তার বিরুদ্ধে জনগণকে স্বাধীনতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য আমি কাজ করে যাব।’