ঐকমত্য কমিশন জনগণ ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঐকমত্য কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের রিকমেন্ডশন্স দিয়ে দিয়েছ । প্রধান উপদেষ্টার সইও আছে সেখানে, তিনিও এটার চেয়ারম্যান বোধ হয়, কো-চেয়ারম্যান। তো এখন অবাক বিস্ময়ে আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি, আমরা যে বিষয়গুলোর সঙ্গে একমত ছিলাম না, নোট অব ডিসেন্টও দিয়েছিলাম। সেই নোট অব ডিসেন্টগুলো লিপিবদ্ধ করার একটা প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, কালকে যখন তারা এটা প্রকাশ করেছে, সেগুলো নেই। নোট অব ডিসেন্টগুলো পুরোপুরি ইগনোর করা হয়েছে। এটা তো ঐকমত্য হতে পারে না। কারণ, ঐকমত্য কমিশন করা হয়েছিল কেন? এই ঐকমত্য কমিশন, এটা আমি বলব, জনগণের সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা এবং এটা অবিলম্বে বিষয়গুলো সংশোধন করা দরকার বলে আমি মনে করি।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর আহমেদ মিলনায়তনে একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিক এহসান মাহমুদের লেখা ‘বিচার সংস্কার নির্বাচন : অন্তর্বর্তী আমলে বাংলাদেশ’ বইয়ে অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, জোনায়েদ সাকি, শাহনাজ মুন্নি প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতি হিসেবে আমরা ঠিক কোন জায়গায় যেতে চাই, সেটা আমরা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারছি কিনা। এত বড় একটা গণ-অভ্যুত্থান, এত ত্যাগের বিনিময়ে, এত প্রাণের বিনিময়ে, সেটাকে আমরা ঠিকভাবে, আমাদের জাতির কল্যাণে আমরা কাজে লাগাতে পারছি কিনা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দেখছি আমাদের অনেক বেশি অনেক আমাদের যতই দিন যাচ্ছে, ততই বেশি আমরা বিভক্ত হয়ে পড়ছি। বিভক্ত হয়ে পড়াটা, এটা কারা করছেন কেন করছেন, এটাও আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।
তিনি বলেন, একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখবেন যে আজকে প্রবলভাবে একটা মিডিয়াতে, বিশেষ করে স্যোশাল মিডিয়াতে খবর নিয়ে যাওয়া হয় এবং প্রতিপক্ষকে একেবারে পুরোপুরি ঘায়েল করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়। আমরা যে সময়টা পার করছি, এই সমটাতে, এই মুহূর্তটাতে, অন্তর্বর্তী এই সময়টাতে ঐক্যের সময়। এটা হচ্ছে আমাদের ন্যূনতম বিষয়গুলোতে একমত হয়ে আমরা একটা রাস্তা ধরব, একটা ট্র্যাক ধরব। সেই জায়গায় বিভক্তি তৈরি করা হচ্ছে। কারা করছে, কেন করছে-এটা নিশ্চয়ই আপনারা উপলব্ধি করছেন এবং নিশ্চয়ই এটা আপনারা সেভাবে আপনারা চিন্তাও করছেন।
ফখরুল বলেন, আমরা দীর্ঘকাল ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করেছি, এদেশের মানুষ করেছে। আমরা ২০১৬ সালেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা যে পরিবর্তন করা দরকার, মেরামত করা দরকার, সে ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ দিয়েছিলেন। তারপর আমরা ২০২২ সালে ২৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছিলাম। তারপর সেটা আমাদের সঙ্গে যারা এক সাথে আন্দোলন করেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা কর্মসূচিটা দেই এবং সেটা আমরা এক সঙ্গে সবাই মিলে দিয়েছিলাম এবং সেভাবেই কিন্তু আমরা আন্দোলনটা করেছি। সুতরাং সংস্কারটা বিএনপির কাছে নতুন না, সংস্কারের মধ্য দিয়েই বিএনপির জন্ম। কিন্তু অত্যন্ত কনসাসলি প্রচারণা চালানো হল, বিএনপির সংস্কারবিরোধী। এটা দারুণভাবে জানানো হয়েছে। ইটস আ টোটালি ফলস। একটা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। কারণ সংস্কারের মধ্য দিয়ে যার জন্ম, সে কখনো সংস্কাবিরোধী হতে পারে না। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, আমরা অনেক আগে থেকে এটা নিয়ে কাজ করছি।
আরও পড়ুন : বহিষ্কৃত গাজীপুর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে দলে ফেরাল বিএনপি
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধের পরই ৫ বছর একটা ভয়াবহ একই রকমের একটা স্বৈরাচারী একটা সরকারের হাতে আমরা পড়েছিলাম, আওয়ামী লীগের হাতে এবং তার পরে ৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পরে আমরা সেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিএনপি ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল। মিডিয়ার যে স্বাধীনতা, সেটা বিএনপি ফিরিয়ে দিয়েছিল। এগুলো বাস্তবতা। এগুলো তো অস্বীকার করবার কোনো উপায় নাই। আমরা প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অব গভর্নমেন্ট থেকে আমরা পার্লামেন্টারি ফর্ম অব গভর্মেন্টে নিয়ে এসেছি। আমরা কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ব্যাপারে আপত্তি করলেও আমরাই কিন্তু ইলেকশনের পরে পার্লামেন্টে সারারাত জেগে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের যে ব্যবস্থা, সেটাকে আমরা পাস করেছিলাম পার্লামেন্টে। সুতরাং বিএনপিকে যদি কেউ দোষারোপ করতে চায়, এটা হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সত্যকথা নয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটি কথা আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, যেহেতু বিষয়টা আমরা আগেও বলেছিলাম যে, আমরা মনে করি সব সংকটের মূলে যে বিষয়টা আছে, এটা হচ্ছে সত্যিকারে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের যে পার্লামেন্ট তৈরি হবে, সেই পার্লামেন্টই এই সমস্ত যে সংস্কারগুলো হয়েছে, তাকে তারা সংবিধানের মধ্যে নিয়ে আসবে এবং সে অনুযায়ী দেশ চলবে। আমরা সেই কারণেই কিন্তু ৫ আগস্টের পরে পরেই নির্বাচনের কথা বলেছিলাম। তখন আমাদের বলা হয়েছিল, আমরা ক্ষমতা চাই সে, সেই জন্য আমরা দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছি। আজকে প্রমাণ হচ্ছে এই নির্বাচনটা যত দেড়ি হচ্ছে তত বেশি সেই শক্তিগুলো শক্তিশালী হচ্ছে, ফ্যাসিবাদী শক্তি হচ্ছে। যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীর দেখতে চায়, এখানে এনার্কি তৈরি করতে চায়, এখানে যেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী না হয়, সেই অবস্থা তারা দেখতে চায়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনারা কিন্তু জনগণের সামনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ওয়াদাবদ্ধ যে, আপনি এখানেই সত্যিকার অর্থে যেটুকু সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার করে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন দেবেন সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে পার্লামেন্ট আসবে, সেই পার্লামেন্ট এই দেশের সমস্যাগুলো সমাধান করবে। সুতরাং আজকে যদি এর কোনো ব্যত্যয় ঘটে, এর থেকে বাইরে যদি যান, তার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনাকেই বহন করতে হবে। এই কথাটা আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই। আমি আশা করব, তারা তাদের উপলব্ধি আসবে এবং অতি দ্রুত এই সংস্কার কমিশনে সব দল যেগুলোর মধ্যে আমরা একমত হয়েছি এবং যেগুলো দ্বিমত পোষণ করেছি সব কিছুকে নিয়ে একটা নির্বাচন আপনি অবিলম্বে দেবেন। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা একটা জনগণের একটা পার্লামেন্ট তৈরি করতে পারব। একটা জনগণের শাসন আমরা দেশে নিয়ে আসতে পারব।