০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৯

জমি বিক্রির টাকা না দিয়ে রিকশাচালককে মারধরের অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

উপজেলা বিএনপির সদস্য আইন উদ্দিন   © টিডিসি ফটো

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় রিকশা চালক ওয়াজ আলীকে (৪৫) জমি বিক্রির বাকি সাড়ে ৪ লাখ টাকা না দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা আইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। ওয়াজ আলী জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার খাজুলিয়া গ্রামের মৃত সোহরাব আলীর ছেলে। অভিযুক্ত আইন উদ্দিন ফুলবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৪ আগস্ট ওয়াজ আলী, সবুজ, জিয়াউর রহমান, ফজিম উদ্দিন ও জাবেদ আলী মিলে এক একর ৪৩ শতাংশ জমি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় মো. জিন্নত আলীর কাছে বিক্রি করেন। জমি বিক্রির দিনই অংশীদাররা তাদের ভাগের টাকা বুঝে নেন। তবে রিকশা চালক ওয়াজ আলীর অংশের ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে গিয়ে আইন উদ্দিন সন্ধ্যায় ওয়াজ আলীকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। এরপরও টাকা দাবি করলে মারধরের পাশাপাশি মরদেহ গুম করার হুমকি দেন এবং জমির দলিল পুড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।

অভিযোগে উল্লেখ্য করেন, বিবাদী মো. জিয়াউর রহমান একই গোষ্ঠীর লোক। বিবাদীরা ওয়াজ উদ্দিনের আত্মীয় হওয়ায় তাদের সাথে সম্পর্ক ভাল। সেই সম্পর্কের সুবাদে ওয়াজ আলীসহ জমির অংশীদার জিয়াউর রহমান, জাবেদ আলী, ফজিমুদ্দিন ও সবুজ মিয়াসহ আর্থিক প্রয়োজনে তাদের ভোগদখলীয় খাজুলিয়া মৌজায় দাগ নং-১১১২ এর ১একর ৪৩ শতাংশ জমি বিক্রয় করার প্রস্তাব করলে ওয়াজ আলীসহ অংশীদারীরা মিলে জমি মো. জিন্নত আলীর কাছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকয় জমি বিক্রি করেন। দরদাম করার সময় বায়না বাবদ-৬ লাখ -টাকা দেয় জিন্নত। বাকি টাকা জমি দলিল সম্পাদনের সময় দিবে বলে জানায়।

আরও পড়ুন: বিএনপির কাউন্সিলে ভোট গণনার সময় ব্যালট বাক্স ছিনতাই নেতাকর্মীদের

পরে ওয়াজ আলীসহ অংশীদাররা জমি লিখে দেয়। লিখে দেয়ার পর ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিবাদীদের হাতে তুলে দেয়। পরে রিকশাচালক ওয়াজ আলী তার ভাগের ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাইলে আইন উদ্দিন তার অফিসে গিয়ে টাকা আনতে বলেন। অফিসে টাকার জন্য গেলে আইন উদ্দিন তার অফিসের পিছনে নিয়া ওয়াজ উদ্দিনকে মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে ওয়াজ আলী কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন।

এরপর ওয়াজ আলী মোবাইল করে টাকা দাবি করলে তাকে হত্যার হুমকি দিয়া বলে যে, আমার অংশের টাকা দিবে না, আমি যদি পাওনা টাকা চাইতে যাই, তাহলে ওয়াজ আলীকে খুন করে মরদেহ গুম করে ফেলবে বা নিজেরাই যেকোন অঘটন ঘটিয়ে তার নামে মিথ্যা মামলা দিয়া হয়রানি করবে।

এবিষয়ে জমির ক্রেতা জিন্নত আলী বলেন, আমি ৫ জনের কাছ থেকে এক একর ৪৩ শতাংশ জমি সাড়ে ১৭ লাখ টাকায় ক্রয় করি এবং সম্পুর্ণ টাকা তাদের বুজিয়ে দেই। কিন্তু, বিএনপি নেতা আইন উদ্দিন রিকশাচালক ওয়াজ আলীর টাকা নিয়ে যায় এবং টাকা চাইতে গেলে আইন উদ্দিনকে মারধর করে টাকা দিবে না বলে জানায়। টাকা যেন দেয়া না লাগে এজন্য আইন উদ্দিন ওয়াজ আলীর দলিল পুড়িয়ে ফেলেছে। দলিল পুড়িয়ে দেয়ার ভিডিও আছে বলেও জানান তিনি।

রিকশাচালক ওয়াজ আলী বলেন, আমি একজন রিকশাচালক। রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। আমি জিন্নত আলীর কাছে জমি বিক্রি করেছি। সেই জমি বিক্রির টাকা বিএনপি নেতা আইন উদ্দিন নিয়ে গেছে। টাকা চাইতে গেলে উল্টো মরে ফেলার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় আমি অপারগ হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। তাছাড়া, আমাকে যে কোন সময় মেরে ফেলতে পারে। আমি চরম নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি।

বিএনপি নেতা আইন উদ্দিন বলেন, ওয়াজ আলীর ওইখানে কোন জমি নেই। সে জমিই লিখে দেয়নি। তাহলে তার টাকা কোথা থেকে আসবে। আমার বিরুদ্ধে এক পক্ষ যড়যন্ত্র করছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে তিনি স্বীকার।করেন, গ্রাম শালিস থেকে টাকার ব্যাগ তার দোকানে নিয়ে এসেছেন।

আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে উত্তেজনা ১৪৪ ধারা জারি

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাড. আজিজুর রহমান বলেন, আমি যতদুর জেনেছি, যে রিকশা চালক ওয়াজ আলীর জমি বিক্রির টাকা আইন উদ্দিন নিয়ে গেছে। একটি ভিডিওতে দেখেছি আইন উদ্দিন টাকা নিচ্ছে। এখন নাকি ওই রিকশা চালকের টাকা আইন উদ্দিন ফেরত দেয়নি।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুল আলম ফারুক বলেন, বিক্রি করা ওই জমিতে ওয়াজ উদ্দিনকে থাকতে দিয়েছিল। এখন ওই জমি নিজের বলে দাবি করছে। এটা সম্পুর্ণ ভুয়া, একটি পক্ষ আইন উদ্দিনের ক্ষতি করার জন্য এসব করছে।

ফুলবাড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুকনুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। দুই পক্ষকেই আমি ডাকিয়ে এনে কথা বলেছি। বিষয়টি সমাধান না হলে মামলা হবে।