পড়েছেন ঢাবিতে, শিক্ষকতায় ছিলেন বুয়েটসহ তিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে
তুমুল আলোচিত সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার মারা গেছেন। রাজধানীর ইউনাউটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার দুপুর ১টায় তিনি মারা গেছেন। তার মেয়ে আইরিন মাহবুব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয়া কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে আলোচিত কমিশনার ছিলেন মাহবুব তালুকদার। ভোট নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেয়া তার বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। বিভিন্ন সময়ে সে বক্তব্যের সমালোচনা করেন সিইসি নুরুল হুদা।
জানা যায়, মাহবুব তালুকদারের সর্বশেষ পরিচয় নির্বাচন কমিশনার হলেও কর্মজীবনে তিনি একধারে একজন শিক্ষক, প্রশাসক ও আমলা ছিলেন। ১৯৪২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন মাহবুব তালুকদার।
মাহবুব তালুকদার কর্মজীবনের প্রারম্ভে দৈনিক ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। পড়িয়েছে তিনটি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। মাহবুব তালুকদার তৎকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (যদিও জগন্নাথ তখন কলেজ ছিল), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিভাগে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুজিবনগর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে চাকুরিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি সরকারি চাকুরির ধারাবাহিকতায় বঙ্গবভনে ৫ বছর অবস্থানকালে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বিশেষ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহর জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের সময় তিনি তার সহকারী প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় অধিষ্ঠিত ছিলেন।
দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ, কাব্যগ্রন্থ, শিশুসাহিত্য, ছড়ার বই ও ভ্রমণকাহিনি মিলিয়ে মাহবুব তালুকদারের বইয়ের সংখ্যা ৪৮। ২০১২ সালে তিনি লাভ করেন বাংলা একাডেমি পুরষ্কার। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে মাহবুব তালুকদার, কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কর্তৃক নিয়োগ পান।
চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছর দায়িত্বের শেষ দিনে এসে মাহবুব তালুকদারের মূল্যায়নে বলেন, নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের লাশ পড়ে গেছে। বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব বলেছিলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে?’
আরও পড়ুনঃ সরকারি কলেজে বেসরকারির আদলে বেতন, অধ্যক্ষ অবরুদ্ধ
কথাটা রূপকার্থে বলার কথা জানিয়ে মাহবুব বলেছিলেন, ‘এটাই সত্য। নির্বাচনের নামে সারা দেশে এমন অরাজকতা কখনও কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তৃণমূল পর্যায়ে এই নির্বাচন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। অন্য দিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়া নির্বাচন বলা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার হঠাৎ অক্সিজেন লেভেল কমে যায় মাহবুব তালুকদারের। বাসায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকায় সেটা দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানেই দুপুর ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
১৯৪২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় জন্ম মাহবুব তালুকদারের। নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।