এক ঘরে দুই ভিসি, স্বামী বেসরকারি-স্ত্রী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
এক ঘর থেকে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে দায়িত্ব পালন করছেন স্বামী-স্ত্রী দুজন। দুজনেই দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য। স্বামী অধ্যাপক ড. হযরত আলী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। আর স্ত্রী হাফিজা খাতুন সম্প্রতি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
গত এপ্রিলে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. হাফিজা খাতুন। ইতিমধ্যে সেখানে যোগদান করেছেন তিনি। অন্যদিকে অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী ২০১৮ জুলাইয়ে চুড়াডাঙ্গার ফাষ্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান।
অধ্যাপক হযরত আলী কর্মজীবনে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার, সিন্ডিকেট সদস্য, কৃষি অনুষদের ডিনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বর্তমানে এশিয়া প্যাসিফিক উইড সাইন্স সোসাইটির কান্ট্রি রিপ্রেজেনটিভ এবং কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। তাঁর কৃষি বিষয়ক ০৫টি বইসহ শতাধিক গবেষণা পত্র দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
তাঁর তত্ত্বাবধানে এ পর্যন্ত অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী পিএইচডি ও মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। তিনি বিভিন্ন সায়েন্টিফিক সোসাইটি এবং কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের আজীবন সদস্য। আগামী জুনে ফাষ্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পদ থেকে অবসরে যাবেন অধ্যাপক হযরত আলী। তার এক বছর আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যান অধ্যাপক হাফিজা খাতুন।
আরও পড়ুন: জাবির প্রথম ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন পাবিপ্রবি ভিসি অধ্যাপক হাফিজা
স্বামী অধ্যাপক হযরত আলীর অবসরের পর দুজনের ইচ্ছে ছিল অস্ট্রেলিয়াতে চলে যাওয়ার। তাদের তিন সন্তান অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ইচ্ছে ছিল অবসরের বেশির ভাগ সময় সন্তানদের সঙ্গে সেখানে কাটাবেন। কিন্তু এরই মধ্যে সুসংবাদ পেলেন ড. হাফিজা। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেলেন উপাচার্য হিসেবে।
হাফিজা খাতুন গণমাধ্যমকে বলেন, খবরটা অবশ্যই আনন্দের । আবার অনেক বড় দায়িত্বেরও। ৪০ বছরের বেশি গবেষণা, শিক্ষকতা ও শিক্ষা প্রশাসনে কাজ করেছি। এই অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগানোর সুযোগ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আরো ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালিয়ে যাব। সবাইকে নিয়ে নিশ্চয়ই সফলও হব।
তারা জানিয়েছেন, এক ঘরে দুই উপাচার্য। তাও আবার স্বামী-স্ত্রী। বাংলাদেশে এর আগে এটি কখনো হয়নি। এ কারণে আমরা গর্বিত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। চেষ্টা থাকবে নিজেদের সবটুকু দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করার।
হাফিজা খাতুনের ৪০ বছরের ও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা এবং গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ১৯৭৯ সালে গৃহায়ন ও গ্ণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছেন। তার দ্বিতীয় কর্মজীবন শুরু করেছেন কুমুদিনী কলেজ এবং ইডেন মহিলা কলেজ্, সেখানে তিনি ১৯৮১-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভূগোল বিভাগের প্রভাষক হিসাবে কাজ করেছেন।
তিনি ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেছেন এবং ধীরে ধীরে সহকারী অধ্যাপক , সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদে ন্যাস্ত হন। তিনি জুন ২০১৫ থেকে জুন ২০১৮ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ গবেষণা প্রশিক্ষন কেন্দ্রের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। অনুষদ সদস্যর পাশাপাশি উন্নয়নের অংশীদার (সামাজিক সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ) হিসাবে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসাবে তিনি নীতি নির্ধারণের অনেক সিদ্ধান্ত এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অবদান রেখেছেন।