সংগ্রামী নারীদের অনুপ্রেরণা ঢাবির সাবেক শিক্ষিকা রুমানা

রুমানা মনজুর।
স্বামী হাসান সাইদের নির্যাতনের শিকারের পর (ডানে)
রুমানা মনজুর। স্বামী হাসান সাইদের নির্যাতনের শিকারের পর (ডানে)  © সংগৃহীত

সময়টা ২০১১ সাল। স্বামীর আঘাতে দুই চোখের দৃষ্টি হারিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা মনজুর। তাতে কী! দমে যাননি রুমানা। পথচলা সাদা লাঠির সাহায্যে হলেও পাড়ি জমিয়েছেন সুদূর কানাডায়। নিয়েছেন আইনে উচ্চশিক্ষা। এ তো পুরনো গল্প!

বর্তমানে কানাডার বিচার বিভাগের আইনজীবী রুমানা মনজুর। স্বামীর নির্যাতনে দৃষ্টিশক্তি হারানো রুমানা প্রতিকূলতাকে জয় করে এখন সংগ্রামী নারীদের অনুপ্রেরণা। অদম্য সাহস আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো রুমানা পেয়েছেন ‘কারেজ টু কামব্যাক’ পুরস্কার।

আরও পড়ুন: কানাডায় সাহসিকতার পুরস্কার পেলেন ঢাবি শিক্ষিকা রোমানা

২০২০ সালে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কোস্ট মেন্টাল হেলথ নামের প্রতিষ্ঠান এই পুরস্কার দিয়ে বলা হয়, রুমানা মনজুর এমন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন যে, অন্য কেউ সেটি মোকাবেলা করতে পারতেন না। তিনি এক বর্বর আক্রমণে অন্ধ হয়েও তার যুবতী মেয়েকে লালন-পালন করার পাশাপশি নতুন দেশে নতুন জীবন ও ক্যারিয়ার গড়ার সাহস করেছেন। তাই তিনি আমাদের সকলের জন্য সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।

আর্ন্তজাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে রুমানা মনজুর নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেই দুর্বিসহ ঘটনার স্মরণ করে বলেন, তখন আমি দুর্বল ছিলাম। এখন আমি বলবো, যারা এ ধরণের পরিস্থিতি শিকার হয় তারা যেনো নিজেদেরকে দুর্বল না ভাবে। লজ্জা তারা পাবে, যারা এ ধরনের কাজ করে। যারা সহ্য করে করছে তাদের লজ্জা পাওয়ার কোন কারণ নেই।

নির্যাতিত ও সংগ্রমী নারীদের আজ অনুপ্রেরণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক এই শিক্ষিকা। তিনি নিজে চোখে না দেখলেও অন্যদের দেখাচ্ছেন আলোর ঝলমলে পথ।

তথ্যমতে, ২০১১ সালে রুমানা উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় ছিলেন। ছুটিতে দেশে ফিরলে ওই বছরের ৫ জুন ঢাকায় ধানমণ্ডির বাসায় স্বামী হাসান সাইদের নির্যাতনের শিকার হন রুমানা। ওই হামলায় নাকে ক্ষত হওয়ার পাশাপাশি দৃষ্টি শক্তি হারান তিনি। রুমানা স্বামীর নির্যাতনে যখন দৃষ্টিশক্তি হারান, তখন তার একমাত্র মেয়ে আনুশেহের  বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। তার চোখের সামনেই ঘটেছিল ঘটনা। সেই মেয়ের বয়স এখন ১৭ বছর। 

পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর কানাডার ভ্যাংকুভারের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (ইউবিসি) তার চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়। আবার কানাডায় ফেরা। সেখানে যাওয়ার পর থেকে রুমানা মনজুরের পথচলা থমকে যায়নি ক্ষণিকের জন্যও। ২০১১ সালে কারাগারেই মৃত্যু হয় রুমানার স্বামী হাসান সাইদের। 

আরও পড়ুন: হেরে যাননি ঢাবি শিক্ষিকা রুমানা, পেলেন আইনের সনদ

দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর বহু বাধা আর জটিলতা মোকাবেলা করে দুই বছরের মাথায় ইউবিসি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর আইন পড়া শুরু করেন তিনি। এরপর ২০১৯ সাল থেকে তিনি দেশটির  বিচার বিভাগে ‘ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডিজেনাস’–এর একজন আইনজীবী হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।


সর্বশেষ সংবাদ