কলাম লেখায় বিরতি টানার ইঙ্গিত অধ্যাপক জাফর ইকবালের

অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল  © ফাইল ফটো

২০২০ সালকে দেশের জন্য একটা দুঃখের বছর উল্লেখ করে আপাতত কলাম লেখায় বিরতি নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। বৃহস্পতিবার ( ২৪ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে টানা ৮ বছরের কলাম ‘সাদাসিধে কথা’য় বিরতি টানার ইঙ্গিত দেন। গত ৮ বছর দেশের প্রায় সব পত্রিকায় কলামগুলো একইদিনে প্রকাশিত হয়ে আসছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে  ‘২০২০, আমাদের মুক্তি দাও’ শিরোনামে  লেখা কলামে জাফর ইকবাল বলেন, আমি ২০১৩ সাল থেকে প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করে ‘সাদাসিধে কথা’ নাম দিয়ে পত্রিকায় লিখে আসছি। টানা ৮ বছর। ...আমার মনে হয়েছে এখন একটু বিরতি দেওয়ার সময় এসেছে, তাই সেই পত্রিকা, পোর্টাল এবং পাঠকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আপাতত নিয়মিত লেখায় বিরতি দিতে চাই। আহমদ ছফা বেঁচে থাকলে খুশি হতেন। তিনি একেবারে চাইতেন না যে আমি ‘বুদ্ধিজীবী’ হওয়ার ভান করে পত্রিকায় কলাম লিখি! সব সময় আমাকে বলতেন, ‘তুমি বিজ্ঞানী মানুষ, লিখতে হলে বিজ্ঞান নিয়ে লিখবে, কেন বুদ্ধিজীবী সেজে কলাম লিখতে যাও?’ কিছু দিন থেকে মনে হচ্ছে আহমদ ছফা ভুল বলেননি।

এই লেখায় ২০২০ সালের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। এর মধ্যে দুটি ঘটনা তার গায়ে জ্বালা ধরিয়ে গেছে উল্লেখ করে লেখক বলছেন, ২০২০ সাল নিরবচ্ছিন্নভাবে একটি খারাপ বছর নয় কিন্তু এই বছরে আমাদের দেশের দুটি ঘটনা আমার গায়ে জ্বালা ধরিয়ে গেছে। দুঃখটা অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে দেখি যে মানসিক যন্ত্রণা একটুখানি হলেও কমানো যায় কিনা।

প্রথমটি সবাই নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারবেন, সেটি হচ্ছে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের ভাস্কর্য নামে শিল্পের একটি বিশেষ ধারার বিরুদ্ধে হুংকার। দেশে এটা নিয়ে একটা বিশাল প্রতিক্রিয়া হয়েছে, কিন্তু আমার জানার কৌতূহল হচ্ছে যদি এটা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য না হয়ে সাধারণ ভাস্কর্য হতো তাহলে প্রতিক্রিয়াটা কী রকম হতো।

দ্বিতীয় বিষয় উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলছেন, দ্বিতীয় বিষয়টি নিয়ে আমি এক ধরনের যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। সেটি নিয়ে দেশে খুব একটা আলোচনা হয়নি, যদিও তার কারণটি আমি বুঝতে পারছি না। সারা পৃথিবীর জ্ঞানসূচকে ২০২০ সালে বাংলাদেশ পৃথিবীর ১৩৮টি দেশের ভেতর ১২১ নম্বরে স্থান পেয়েছে। সেটা কতটুকু খারাপ সেটা বোঝার জন্য এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, এই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৬টি দেশের ভিতরে বাংলাদেশ সবার পিছনে। এমনকি আমরা পাকিস্তানেরও পেছনে— যে পাকিস্তানে জঙ্গিরা মেয়েদের লেখাপড়া করতে দেবে না বলে নিয়মিত গার্ল স্কুল পুড়িয়ে দেয়। যে দেশে মালালা নামে একটা মেয়ের মাথায় গুলি করে তাকে নোবেল পুরস্কার পাইয়ে দিয়েছে। যে পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত, সারা পৃথিবীর একটি করুণার পাত্র, আমাদের দেশের লেখাপড়া সেই দেশ থেকেও খারাপ।

বিশ্ববিদ্যালয়, এর প্রশাসন নিয়ে সমালোচনা করে এই লেখক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না যদি তারা গবেষণা না করে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্র পড়ানোর বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা নিয়ে সেখানে বাজেট নেই, সেটা নিয়ে কারও মাথাব্যথাও নেই। তাহলে আমাদের দেশের লেখাপড়া যদি সারা পৃথিবীর তুলনায় সবচেয়ে খারাপ হয়, অবাক হওয়ার কিছু আছে? নেই। এর সমাধান কিন্তু কঠিন নয়—বেশ সোজা। এই দেশের সরকারকে লজ্জার মাথা খেয়ে স্বীকার করতে হবে যে আমাদের দেশের লেখাপড়ার অবস্থা খুব খারাপ। একটা সমস্যা সমাধান করার প্রথম ধাপ হচ্ছে যে সমস্যাটি বোঝা।


সর্বশেষ সংবাদ