ভিকার উন নিসা নূন, কে এই মহীয়সী নারী?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২০, ০৮:০২ PM , আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২০, ০৯:২১ AM
রাজধানীর সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ। সারাদেশের সবাই একেনামেই চেনেন। কিন্তু অনেকেরই অজানা ভিকারুন্নেসা নুন কে? প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পেছনে তার অবদানে কী? কীভাবে সেরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ।
ভিকার উন নিসা নূন ছিলেন পাকিস্তানের সপ্তম প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুনের স্ত্রী। পেশাগত দিক দিয়ে তিনি সমাজকর্মী ছিলেন। জন্মগতভাবে ছিলেন অস্ট্রিয়ান। ১৯২০ সালের জুলাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তখন তার নাম রাখা হয়েছিলো ভিক্টোরিয়া।
তার স্বামী ফিরোজ খান ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। এর আগে ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত পাঞ্জাবের মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) গভর্নর ছিলেন। আর ১৯৩৬ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
বিয়ের পরে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ভিকার উন নিসা। তার নাম ভিক্টোরিয়া থেকে রাখা হয় ভিকার উন নিসা। ফিরোজ খান নুন ইন্ডিয়ান ভাইসরয়ের মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করে দিল্লী ত্যাগ করেন এবং লাহোর চলে যান। তখন ভিকার উন নিসা পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবির্ভূত হন।
পরে পাঞ্জাব প্রোভিন্সিয়াল সাব কমিটির সদস্য হন। সেখানে সিভিল ডিসঅবিডেন্স আন্দোলনের সময় তিনবার গ্রেফতার হন তিনি। ১৯৪৭ সালে জনগণ স্থানান্তর হওয়ার ফলে উদ্বাস্তুদের জন্য নিজেকে যুক্ত করেন তিনি। বিভিন্ন উদ্বাস্তু ক্যাম্প ও কমিটির জন্য সহযোগিতা করেন। সে সময় রাওয়ালপিন্ডিতে ভিকার উন নিসা কলেজ ফর উইম্যান নামে কলেজ স্থাপনে সাহায্য করেন তিনি।
১৯৫২ সালে ভিকার উন নিসা নূন ঢাকায় মেয়েদের জন্য আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরুর লক্ষ্যে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নামানুসারেই স্কুলটির নামকরণ করা হয়েছে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল। এর সাথে ক্ষেত্রবিশেষে উপমহাদেশের ইতিহাসের সংযোগ রয়েছে। সেটিই বর্তমানে মেয়েদের জন্য দেশের একটি নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
স্বামীর মৃত্যুর পরেও সমাজ সেবামূলক কাজ চালিয়ে যান ভিকার উন নিসা। তিনি অল্প সময়ের জন্য পাকিস্তানের পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ফেডারেল মন্ত্রীও ছিলেন। দীর্ঘ অসুস্থতার পর ভিকার উন নিসা ২০০০ সালের ১৬ জানুয়ারি ইসলামাবাদে মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর আমন্ত্রণে ফিরোজ খানের সঙ্গী হয়েছেন তিনি। পিআইএর বিশেষ বিমানে তাঁরা নয়াদিল্লি যান। সিঁড়ির কয়েক ধাপ থাকতেই কীভাবে যেন বেগম নূনের একটি জুতা নিচে পড়ে যায়। সিকিউরিটির কেউ নন, বরং সিঁড়ির নিচ থেকে বেগম নূনের জুতাটি স্বয়ং জওহরলাল নেহেরু তুলে আনেন। সবাইকে হতবাক করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জুতাটি বেগম নূনের পায়ে পরিয়ে দিতে এগিয়ে যান। ধারণা করা যায়, নেহরু ও নূন উভয়ের অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কারণেই এই বিরল ঘটনার জন্ম।
তার প্রতিষ্ঠিত ঢাকার বিদ্যালয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার হয়েছে, এখনও চলছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর নামে স্বাধীন বাংলাদেশে বিদ্যালয় থাকা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক কথা হয়েছে। মাঝেমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে দেখা যায়। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে ভিকারুননিসার নামটি শিক্ষার্থীদের কাছে আবেগ-গর্বের নামই বলা যায়।