আজকের দিনে জন্ম যার

আলেকজান্ডার পোপ, মহাকাব্য ইলিয়াডের নতুন রূপকার

আলেকজান্ডার পোপ
আলেকজান্ডার পোপ  © ফাইল ছবি

মহাবিশ্বকে জানার অন্যতম উপায় হলো সাহিত্য। এই সাহিত্য সৃষ্টি হয় ইতিহাসকে আশ্রয় করে আবার কখনো সাহিত্য সৃষ্টি করে নতুন ইতিহাস। পৃথিবীর বুকে যে-সকল জ্ঞানীগুনী সাহিত্যের মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন আলেকজান্ডার পোপ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। আজ ২১ মে, এই মহান সাহিত্যিকের জন্মদিন।

আলেকজান্ডার পোপ একজন ইংরেজ কবি, জন্মগ্রহণ করেন ২১ মে ১৬৮৮ । স্যাটায়ার এবং সিমিলি ধাঁচের লেখার জন্য তিনি জনপ্রিয়। এছাড়া তাঁর লিখায় হিরোয়িক কাপলেট ধাঁচের উপস্থিতিও লক্ষণীয়। ‘দা অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব কোটেশানে’ শেকসপিয়রের পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কোটেশন নেয়া হয়েছে  তার লেখা থেকে।

হোমারের ইলিয়াড় মহাকাব্যের তিনিই প্রথম ইংরেজি অনুবাদ করেন।

আলেকজেন্ডার পোপের কাপড় ব্যবসায়ী পিতা আলেকজেন্ডার পোপ সিনিয়র (১৬৪৬ – ১৭১৭) এবং মা এডিথ (১৬৪৩-১৭৩৩) দুজনেই ছিলেন রোমান ক্যাথলিক। সেই সময় ক্যাথলিকদের উপর আরোপিত টেস্ট অ্যাক্ট ও রাজনৈতিক অস্থিথিশীলতার কারণে শৈশবে পোপের লেখাপড়া বন্ধ থাকে।

পোপ ঘরে বসে তার মাসির কাছে লেখাপড়া চালিয়ে যান। পরে তিনি লন্ডনের দুইটি ক্যাথলিক স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেই সময় সমগ্র ইংল্যান্ড জুড়ে ক্যাথলিক বিদ্বেষ দানা বেঁধে উঠেছিল। প্রোটেস্ট্যান্টরা লন্ডন বা ওয়েস্ট মিনিস্টার শহরে ক্যাথলিকদের বাসস্থানের বিরোধি ছিল। যার কারণে ১৭০০ সালে বাধ্য হয়ে তিনি পরিবারের সাথে রয়েল উইন্ডফরেস্ট এর কাছে বিনফিল্ড এর পোপসউডে চলে আসেন।

তিনি তার অনেক সাহিত্যকর্মে নিজ জীবনী তুলে ধরেছেন। ‘উইন্ডসর ফরেস্ট’ কবিতায় তিনি গ্রামাঞ্চলে আসা এবং তার নতুন আবাসস্থলের বর্ণনা তুলে ধরেছেন। বিনফিল্ডে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। অবসর সময় কাটানোর জন্য  তিনি বিভিন্ন সাহিত্যের ক্লাসিক লেখাগুলো পড়তে শুরু করেন।

জেফ্রি চসার, উইলিয়াম সেক্সপিয়ার, হোমার, ভার্জিল, হোরাক ও জুভেনাল তার পছন্দের তালিকার শীর্ষে ছিল। পোপের প্রিয় বন্ধু ছিলেন জন ক্যারিল। মজার বিষয় হলো ক্যারিল পোপের চেয়ে ২০ বছরের বড় ছিলেন। তরুণ পোপকে তিনি নাট্যকার উইলিয়াম উইচারলি এবং কবি উইলিয়াম ওয়ালস এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। পোপের প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ লেখা প্যাস্টোরালস সম্পাদনা করেছিলেন তারা।

১৭০৯ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয় এটি। এই লেখা রাতারাতি তাকে খ্যাতি এনে দেয়। এরপর ১৭১১ সালে প্রকাশিত হয় তার অন্যতম জনপ্রিয় লিখা এসে অন ক্রিটিসিজম। ১৭১১ সালের দিকে জন গে, জোনাথন সুইফট, থমাস পার্ণেল এবং জন আরবাটনট কে সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন স্ক্রিবিলারুস ক্লাব। ব্যঙ্গাত্মক সাহিত্যে এই ক্লাবের সদস্যদের অবদান ছিল। 

পোপের সর্বাধিক জনপ্রিয় কবিতা ‘দা রেপ অব দা লক’ প্রকাশিত হয় ১৭১২ সালে। এটি একটি ব্যঙ্গাত্মক লেখা। উচ্চবংশীয়দের মধ্যে কলহ-বিবাদ ছিল এই কাব্যের মূল উপজীব্য।

১৭১৫ সালে তিনি গ্রিক মহাকাব্য হোমারের ইলিয়াড এর ইংরেজি অনুবাদের কাজ শুরু করেন পরিশ্রমসাধ্য এই কাজটি শেষ করেন ১৭২০ সালে। হোমারের অনুবাদকর্ম অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি ১৭১৯ সালে টুইকেনহামে 'গ্রোটো এন্ড গার্ডেন' নামে সুড়ঙ্গ এবং বাগানসহ একটি দৃষ্টি নন্দন ভিলা নির্মাণ করেন। সুদৃশ্য মার্বেল পাথর ও স্ফটিক দিয়ে সাজানো হয়েছিল এই প্রমোদ ভিলাটি। বাগান আর বাড়িটি পুরোপুরি ধ্বংস হলেও সুরঙ্গটির অস্তিত্ব এখনও আছে। স্থানটি দর্শনার্থীদের জন্য দিবস বিশেষ খুলে দেয়া হয়।

তার অন্যতম রচনা 'এসে অন ম্যান' দার্শনিক কাব্যটি প্রকাশিত হয় ১৭৩২ থেকে ১৭৩৪ সালের মধ্যে।

১৭৪৪ সালের ৩০ মে টুইকেনহামের নিজ ভিলায় মহাপ্রয়াণ ঘটে এই কিংবদন্তীর। টুইকেনহামের চার্চ অব ইংল্যান্ডের সেন্ট মেরী দা ভার্জিন এর সমাধিক্ষেত্রে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া 


সর্বশেষ সংবাদ