৮৮ বছরে সাম্য, মানবিক মর্যাদার গল্প বলার কারিগর
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৩, ০৬:১৮ PM , আপডেট: ২৩ জুন ২০২৩, ০৮:৩৫ AM
আজ শুক্রবার (২৩ জুন) জাতির অন্যতম বাতিঘর, লেখক, গবেষক, ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ৮৮তম জন্মদিন। তিনি বাংলাদেশে শিক্ষা, সংস্কৃতি, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার পরিবেশ সুরক্ষা, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ২৩ জুন বিক্রমপুরের বাড়ৈখালীতে। তাঁর শিক্ষাজীবন কেটেছে রাজশাহী, কলকাতা, ঢাকা ও যুক্তরাজ্যে। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন এই অধ্যাপক যুক্তরাজ্যের লিডস ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট এবং লেজিস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকার সেন্ট গ্রেগোরিস হাই স্কুল থেকে ১৯৫০ সালে মেট্রিকুলেশন, ১৯৫২ সালে রাজধানীর নটর ডেম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
তার শিক্ষাজীবন কেটেছে ঢাকা, রাজশাহী, কলকাতা ও যুক্তরাজ্যে। কর্মজীবনের শুরুর দিকে তিনি মুন্সীগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের লিডস ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট এবং লেজিস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটেরও সদস্য ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের উপাচার্য নিয়োগের প্যানেলে দুইবার মনোনয়ন পেলেও উপাচার্য পদ প্রত্যাখ্যান করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। কলাম লেখক হিসেবেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। সত্তরের দশক থেকে বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখছেন তিনি। ওসমানী উদ্যান, লালন ফকিরের আখড়া, আড়িয়ল বিল রক্ষাসহ নানা আন্দোলনে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যুক্ত থেকেছেন দেশের নানা গণতান্ত্রিক ও সামাজিক আন্দোলনে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাকালে তিনি মাসিক পরিক্রমা (১৯৬০-৬২), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা (১৯৭২), ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্র (১৯৮৪) ইত্যাদি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন। অবসরের পর থেকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘নতুন দিগন্ত’ সম্পাদনা করছেন। প্রবন্ধ, অনুবাদ ও কথাসাহিত্য মিলিয়ে তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১১০।
তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন কার্ল মার্ক্স, শ্রেণি সংগ্রাম, মানব মুক্তি, সামাজিক সাম্য ও মানবের কল্যাণে অকপটে সত্য উচ্চারণে। অন্য সব পরিচয়কে ছাপিয়ে তিনি স্বস্তিবোধ করেন একজন সমাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে। সমাজতন্ত্রের প্রতি তার অপার দুর্বলতার পাশাপাশি রয়েছে প্রশ্নহীন পক্ষপাতও
কালের সাক্ষী, নেতা জনতা ও রাজনীতি, পুঁজিবাদেও দুঃশাসন, গণতন্ত্রের অমসৃণ পথ, রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি, রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথের মতোই, সময় বহিয়া যায়, বিচ্ছিন্নতায় অসম্মতি, কুমুর বন্ধন, শরৎচন্দ্র ও সামন্তবাদ, বঙ্কিমচন্দ্রের জমিদার ও কৃষক, নজরুল ইসলামের সাহিত্যজীবন, শেকসপিয়রের মেয়েরা, ধ্রুপদী নায়িকাদের কয়েকজন, ইংরেজি সাহিত্যে ন্যায়-অন্যায়, বাঙালীর জাতীয়তাবাদ এবং জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি, হোমারের অডিসি, এ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব, ইবসেনের বুনোহাঁস, হাউসম্যানের কাব্যের স্বভাব অন্বেষণ, দ্বিতীয় ভুবন, নিরাশ্রয় গৃহী, আরণ্যক দৃশ্যাবলী, অনতিক্রান্ত বৃত্ত ইত্যাদি তার অন্যতম সৃষ্টিকর্ম।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর লেখায় উঠে এসেছে সাম্যবাদী রাজনৈতিক দর্শনে অবিচল চিন্তা, সমাজ বিপ্লবে তরুণদের ভূমিকার মতো বিষয়গুলো। একই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে দেয়া সাক্ষাৎকারে তার গভীর দার্শনিকতা ও ইতিহাস চেতনার প্রভাব স্পষ্ট। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এখনো উপলব্ধি করেন সামাজিক সংকট ও সামাজিক মুক্তিতে সংস্কৃতি চর্চার প্রয়োজনীয়তা। একই সাথে তিনি বিশ্বাস করেন পুঁজিবাদের পরিবর্তে সামাজিক মালিকানা সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করতে পারে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন লেখক সংঘ পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক ও আবদুর রহমান চৌধুরী পদক। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় গুণী এই অধ্যাপককে।