ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর পিছনে কলকাঠি নেড়েছেন যারা
রাতভর নাটকীয়তার পর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে (পার্লামেন্ট) অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন।
শনিবার (৯ এপ্রিল) সারাদিন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন তিন থেকে চার দফা মুলতবির পর মধ্যরাতে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিষদের ৩৪২ জন সদস্যের মধ্যে ১৭৪ জন সদস্যই ইমরান খানের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ভোট দেন।
ইমরান খানের প্রতি এই অনাস্থা ভোটের আয়োজনে কাদের ভূমিকা রয়েছে সেটি নিয়ে চলছে আলোচনা। মূলত ইমরানকে হটাতে পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো এক হয়েছিল। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে একটি শক্তিশালী জোটও গঠন করেছিল তারা।
২০১৯ সালে ইমরান খান সরকারের পতন পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে দেশজুড়ে লংমার্চ করেছিলেন পাকিস্তানের জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (জেইউআই-এফ) প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার দুর্দিন: মেগা প্রকল্পের মেগা ভয়!
সেসময় মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ প্রায় সব বিরোধী দলই মাওলানার আহ্বানে আজাদি মার্চে সরাসরি অংশ নিয়েছিল। মূলত তখন থেকেই রাজপথে প্রকাশ্যে ইমরান খান বিরোধী তৎপরতা নজরে আসে।
এছাড়া পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন-র (পিএমএল-এন) বর্তমান প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ, মাওলানা ফজলুর রহমান ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির যৌথ প্রচেষ্টাতেই ইমরান সরকারের পতন হয়েছে।
শাহবাজ শরিফ
পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ দুর্নীতি সংক্রান্ত দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে লন্ডনে চলে যাওয়ার পরই তার দল পিএলএম-এন পরিচালনার দায়িত্ব পান শাহবাজ। ইমরান সরকারের পতন হওয়ার পর প্রধান বিরোধী দলনেতা শাহবাজ শরিফকে অভিনন্দন জানান সদ্য স্পিকারের আসনে বসা আয়াজ সাদিক। ধারণা করা হচ্ছে এই শাহবাজই পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।
৭০ বছর বয়সী শাহবাজ পাঞ্জাবের তিন তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী। শাহবাজ পারিবারিকভাবে ধনী ব্যবসায়ী এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন-র (পিএমএল-এন) বর্তমান প্রেসিডেন্ট। দেশের বাইরে শাহবাজ ততটা পরিচিত নন। লন্ডন ও দুবাইয়ে বিলাসবহুল বাড়ি থাকার কারণে খবরের শিরোনাম হলেও দেশের ভেতরে প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য শাহবাজের সুনাম রয়েছে।
মাওলানা ফজলুর রহমান
মাওলানা ফজলুর রহমান পাকিস্তানের জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (জেইউআই-এফ) বর্তমান সভাপতি ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। ১৯৮৮ সাল থেকে বর্তমান পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য তিনি।
১৯৮১ সালে তিনি যখন জেনারেল জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কারাবন্দি হন তখন তাকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব নির্বাচন করা হয়। মাওলানা ফজলুর রহমান রাজনৈতিক মামলায় মোট ১০ বার কারাবরণ করেছেন।
১৯৯৩ সনে বেনজীর ভূট্টো দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে মাওলানা ফজলুর রহমান জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন: এবার রানু মণ্ডলের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন হিরো আলম
২০১৯ সালে ইমরান খানের পদত্যাগ এবং পুনরায় নির্বাচন দাবিতে মাওলানা ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানজুড়ে আজাদি মার্চ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় কয়েক লাখ কর্মী-সমর্থক নিয়ে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে কয়েক দিন অবস্থান করেন তিনি।
আসিফ আলি জারদারি
আসিফ আলি জারদারি হলেন পাকিস্তানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির সহ-সভাপতি। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো তার স্ত্রী। বেনজির ভূট্টোর দ্বিতীয় দফা শাসনামলে জারদারি পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রীও ছিলেন। ৬৭ বছর বয়সী আসিফ জারদারি ২০০৭ সালে বেনজির ভুট্টো নিহত হওয়ার পর পিপিপির হাল ধরেন। ২০০৮ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে দুর্নীতি এবং খুনের মামলায় জারদারি ১১ বছর জেলে কাটিয়েছেন। কিন্তু কোন মামলাতেই দোষী প্রমাণিত হননি। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে পরিচিত রাজনৈতিক পরিবারগুলোর একটি হচ্ছে ভুট্টো পরিবার। গত পাঁচ দশকে তারা বেশ কয়েক দফায় পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিল।
বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বেনজির ভুট্টো ও আসিফ আলি জারদারির ছেলে। সন্ত্রাসী হামলায় তার মা বেনজির ভুট্টো নিহত হওয়ার পর মাত্র ১৯ বছর বয়সে পিপিপির চেয়ারম্যান হন তিনি। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করা ৩৩ বছর বয়সী বিলাওয়াল ভুট্টো একজন প্রগতিশীল নেতা হিসেবে পরিচিত।
বিলাওয়াল ভুট্টো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুবই জনপ্রিয়। যদিও উর্দু ভাষায় দুর্বল হওয়ায় তাঁকে প্রায়ই উপহাসের পাত্র হতে হয়।