লজ্জিত-আতঙ্কিত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি, ফিরতে চান যাদবপুরে
হেনস্থার কথা বলতে গিয়ে ক্যামেরার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন কলকাতা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহম্মদ আলি। তিনি জানান, এত অপমানের পর আর আলিয়ার উপাচার্য পদে নয়, ফিরতে চান যাদবপুর বিশ্ববদ্যালয়ে। উপাচার্য মহম্মদ আলি তার নিজের এ ইচ্ছার কথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকেও জানিয়েছেন।
ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে সোমবার মহম্মদ আলি বলেন, শিক্ষক হিসেবে আমি ভীষণভাবে লজ্জিত এবং আতঙ্কিত। তিনি বলেন, ঘটনার দিন বের হওয়ার সময় গেটের কয়েকজন ছাত্র বাধা দেয়। মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়। যাতে করে ওরা ভেতরে না ঢুকতে পারে তাই নিরাপত্তারক্ষীকে বলে দরজায় তালা দিয়ে রেখেছি। কিন্তু তারা নিরাপত্তারক্ষীকে চাপ দিয়ে দরজা খুলে ফেলে।
‘‘এসময় কিছুক্ষণের জন্য বোর্ড রুমে গিয়ে বসে ছিলাম। এমনভাবে ওরা ধাক্কা মারছিল, অশালীন ভাষা ব্যবহার করছিল ফলে বাধ্য হয়ে আবার নিজের ঘরে চলে আসি। অসহায় লাগছিল, দমবন্ধ হয়ে আসছিল।’’
আরও পড়ুন: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে গালিগালাজ, কান ধরে উঠবস করতে চাপ
এর আগে, গতকাল রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষে ঢুকেন বহিষ্কৃত এক ছাত্রনেতা। তিনি উপাচার্যকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি, কটূক্তি ও খুনের হুমকি দেন। গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল নামের অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন এ নেতা ২০১৮ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য বহিষ্কারও হয়েছিলেন।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে ব্যর্থ বলে মনে হচ্ছিল। আমার কক্ষে ঢোকার আগ মুহূর্তে পুলিশকে ফোন করে জানিয়েছিলাম। প্রথম থেকেই ভীষণভাবে দাপুটে নেতা বলে দাবি করে। কোথা থেকে এত সাহস পায় জানি না। আমি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ফিরে যেতে চাই না। সুরক্ষিত মনে হচ্ছে না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যেতে চাই।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিষ্কৃত এ ছাত্রনেতার তাণ্ডবের ঘটনায় আজ একটি অডিও ক্লিপ সামনে এসেছে। তাঁদের দাবি, ওই অডিও ক্লিপে যে দু’জনের কথোপকথন শোনা গেছে, তাঁদের একজন বর্তমান ও একজন প্রাক্তন ছাত্র। দু’জনের কথোপকথনে স্পষ্ট, উপাচার্যকে অপদস্থ করে কীভাবে বিতাড়ণ করা যায়, সেই পরিকল্পনাই করা হচ্ছিল।
অবশ্য অভিযুক্ত গিয়াসউদ্দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে ওই ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘উপাচার্য কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত এদিনে সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম। আমি অনুতপ্ত নই। তবে ভিসি চাইলে ক্ষমা চাইতে পারি।’
এদিকে, ভিসির কক্ষে তাকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল হতেই চারিদিক থেকে নিন্দার ঝড় শুরু হয়। গিয়াসউদ্দিনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরের মানুষ। এরপর চাপের মুখে গতকাল রবিবারই অভিযুক্ত ছাত্রনেতা গিয়াসউদ্দিন মণ্ডলকে গ্রেফতার করে টেকনো থানার পুলিশ।