২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০৫

কমেডিয়ান থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট

ভলোদিমির জেলেনস্কি  © টিডিসি ফটো

রাশিয়ার আক্রমণের মুখে প্রাণ হারানোর আশঙ্কা থাকলেও দেশে ছেড়ে পালাননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সামরিক পোশাকে রাস্তায়ও নেমেছেন তরুণ এ নেতা। কমেডিয়ান থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া জেলেনস্কি তার নেতৃত্ব, সাহসিকতার কারণে প্রশংসায় ভাসছেন।

২০১৯ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করেছিলেন ৪৪ বছরের জেলেনস্কি। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে বসেছিলেন। তবে তারও আগে গোটা দেশের কাছে জেলেনস্কি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন একজন অভিনেতা হিসেবে।

আরও পড়ুন: তাপমাত্রা শূন্যের নীচে, আমরা জমে যাচ্ছি—ইউক্রেনে মেডিকেল ছাত্রীর আর্তনাদ

কাকতালীয়ভাবে তিনি যে কমেডি শো-এর জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, সেখানেও প্রেসিডেন্টের চরিত্রেই অভিনয় করেছিলেন জেলেনস্কি। ‘সার্ভেন্ট অফ দ্য পিপল’ টেলিভিশন শো-তে তিনি ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। তারপর সেখানে আচমকাই তিনি হয়ে ওঠেন দেশের প্রেসিডেন্ট। বাস্তবেও জেলেনস্কির জার্নিটা অনেক সেরকমই। টেলিভিশন শো-এর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ২০১৮ সালে তাকে প্রচার চালাতে দেখা গিয়েছিল।

মাত্র ১৭ বছর বয়সে কমেডিয়ান হিসেবে তার অভিনয়ে হাতেখড়ি। ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এরপর দেখা গেছে একাধিক টেলিভিশন শোতে। ২০০৮ সালে, তিনি ‘লাভ ইন দ্য বিগ সিটি’ ফিচার ফিল্মে কাজ করার সুযোগ পান। এরপর তিনি এই ছবির সিক্যুয়েল ‘লাভ ইন দ্য বিগ সিটি ২’ তেও কাজ করেন। ছবিটির তৃতীয় অংশ এসেছিল ২০১৪ সালে। এরপর জেলেনস্কি তার অভিনয় জীবন শুরু করেন অফিস রোমান্স ও আওয়ার টাইমের মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১২ সালে, তার চলচ্চিত্র হেভস্কি ভার্সেস নেপোলিয়ন মুক্তি পায়। একই বছরে তার হিট ছবি ৮ ফার্স্ট ডেটসও আসে। এই ছবির সিক্যুয়েল ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে মুক্তি পায়।

২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ভলোদিমির জেলেনস্কি বোর্ডের সদস্য এবং টিভি চ্যানেল ইন্টারের সাধারণ প্রযোজক ছিলেন। ২০১৪ সালে, তিনি ইউক্রেনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রাশিয়ান শিল্পীদের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন। ২০১৫ সালে রাশিয়ান শিল্পীদের ইউক্রেনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালে জেলেনস্কির রোমান্টিক কমেডি ছবি লাভ ইন দ্য বিগ সিটি ২ ইউক্রেনে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১৫ সালে, ভলোদিমির জেলেনস্কি সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল নামে একটি শোতে কাজ করেছিলেন। মজার বিষয় হল, এই শোতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভলোদিমির।

তিনি বেশিরভাগই রাশিয়ান ভাষার প্রযোজনায় কাজ করেছিলেন। তার প্রথম ইউক্রেনীয় ভাষার চলচ্চিত্র ছিল আই, ইউ, হি, সি। এই ছবির স্ক্রিপ্ট প্রথম লেখা হয়েছিল ইউক্রেনীয় ভাষায়। এরপর ছবিটির অভিনেত্রী অ্যাগন গ্রুডিতের জন্য রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। পরে এটি ইউক্রেনীয় ভাষায় ডাব করা হয়।

আরও পড়ুন: ইউক্রেন অভিযানের শুরুতেই কেন চেরনোবিল দখল করল রাশিয়া

এককালের কমেডি অভিনেতা এখন যুদ্ধকবলিত দেশের প্রেসিডেন্টের ভূমিকায়। সেলুলয়েডে অবশ্য যুদ্ধের সৈনিকের চরিত্রে তাঁকে কখনও দেখা যায়নি। তবে বাস্তবে দেখা গেল। মিলিটারি পোশাকে জেলেনস্কি পৌঁছে গিয়েছিলেন ওয়ারজোনে। ইউক্রেনের সেনাকে পেপটকও দিয়ে এসেছেন তিনি। মিলিটারি অবতারে জেলেনস্কির সেই ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।

ইউক্রেনের ক্রিভি শহরে জন্মগ্রহণ করা জেলেনস্কি নিজের দেশের ভাষা শেখার আগেই রপ্ত করে ফেলেছিলেন রুশ ভাষা। দেশে হামলা হতেই সেই রুশ ভাষাতেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। 

আবেগপ্রবণ, অনভিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট। আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ এভাবেই অভিহিত করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে। অভিনেতা থেকে আচমকাই রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে ওঠা জেলেনস্কি রাশিয়ার মতো সুপার পাওয়ারের আগ্রাসন কী ভাবে সামলান, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।