ইউক্রেন পরিস্থিতিতে কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে?
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর প্রথম দিনেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে৷ বাংলাদেশেও কি ইউক্রেন পরিস্থিতির প্রভাব পড়তে পারে? বাংলাদেশে গত নভেম্বরে সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহণ ভাড়াসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তার ধাক্কা সামলাতে লাগরিকরা হিমসিম খাচ্ছেন৷ ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে তেলের দাম যদি বেড়ে যায় তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল হওয়ার আশঙ্কা আছে৷
বিশ্ব বাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ১০২. ৩২ ডলারে উঠেছে৷ বুধবার ছিল ৯৯ ডলার৷ আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস ও স্বর্ণের দামও বাড়ছে৷ তাছাড়া গত কয়েক মাস ধরেই বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী৷
তবে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই ঠিক হবে না বলে মনে করেন সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম৷ তার মতে, ‘‘এতে চরম অস্থিরতার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে। কিছু ব্যবসায়ী যে-কোনো অজুহাতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো জন্য বসে থাকেন৷ তেলের দাম বাড়ানো হলে সেটাকে ইস্যু করে সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেবে তারা৷ গত নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর কী পরিস্থিতি হয়েছিল, আমরা তা দেখেছি৷’’
আরও পড়ুন: সবাই ভীত, একা লড়ছি আমরা: ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট
তার মতে, ‘‘সরকারকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য ভর্তুকি বাড়াতে হবে। এজন্য সরকারকে প্রয়োজনে ঋণ করতে হবে৷ সরবার এডিবি, বিশ্বব্যাংক, অথবা সৌদি আরব, কাতার থেকে দ্বিপক্ষীয় ঋণ নিতে পারে৷ এর আগেও সরকার নিয়েছে৷’’
আর গ্যাসের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘আমরা শুধুমাত্র এলএনজি আমদানি করি৷ সেটার দাম বাড়ানোও ঠিক হবে না। সরকার এখন সেবাখাতে তার পাওনা টাকা আদায় করেও তা দিয়ে ভর্তুকি দিতে পারে৷’’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘‘আমরা কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে সুফল পেয়েছি। এখন এই পরিস্থিতিতেও আমাদের জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিতে হবে৷ আর তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে তিন মাসও হয়নি। তার জের এখনো চলছে৷ তাই নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে সরকার যে টাকা পাবে, তার চেয়ে ক্ষতি হবে অনেক বেশি৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকার যে গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে ভতুর্কি কমাতে চায় তা-ও পরিকল্পনা করে করতে হবে। অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি কমাতে পারলে এখানে ভর্তুকির চাপ কমবে৷’’
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং অধ্যাপক শামসুল আলম মনে করেন এখন বাজার মনিটরিংও বাড়াতে হবে৷ কারণ, ‘‘অসাধু ব্যবসায়ীরা যে কোনো অজুহাত দেখিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে৷’’
তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, ‘‘এই যুদ্ধ পুরো ইউক্রেন জুড়ে না-ও ছড়াতে পারে। এটা কয়েকটি এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। সেটা হলে এখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ সরকারের এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার৷’’
আর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘‘ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা এ বিষয়ে এখনো মন্তব্য করার সময় আসেনি। তবে এর কারণে জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়বে৷ এর প্রভাব শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশের ওপরেও পড়বে৷’’
ইউক্রেনে বাংলাদেশিদের অবস্থা
ইউক্রেনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই৷ পোল্যান্ড থেকে ইউক্রেনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দূতবাস সহায়তা দেয়া হয়৷ কিয়েভ থেকে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টার দিকে পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে যাওয়ার সময় সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশি ইউসুফ হোসেন জানান, ‘‘আমরা কেউই ভাবতে পারিনি এভাবে হামলা হবে। ভেবেছি হুমকির মধ্যেই সীমবদ্ধ থাকবে৷ এখন সবাই আতঙ্কে আছে৷ পোল্যান্ডে আমাদের দূতাবাস থেকে মেসেজ দিয়ে পোল্যান্ড সীমান্ত এবং হামলার বাইরের শহরগুলোতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে৷ পোল্যান্ড সীমান্ত খুলে দেয়া হয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে৷’’
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের রাজধানীতে ঢুকে পড়েছে রুশ সেনারা
তিনি বলেন, কমপক্ষে ১০ হাজার বাংলাদেশি আছেন, যাদের মধ্যে ছাত্র বেশি৷ তাদের বড় একটি অংশ কিয়েভে থাকেন। এখন সবাই সীমান্তের দিকেই যাচ্ছেন৷ তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুব খারাপ না হলে আমি ইউক্রেন ছাড়তে চাই না। কারণ, আমি এখানেই প্রতিষ্ঠিত হতে চাই৷’’
এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যতটুকু খবর আছে, প্রায় ৫০০ জন বাংলাদেশি সেখানে (দনেৎস্ক) অবস্থান করছেন৷ এর মধ্যে প্রায় ২৫০ জনকে নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের পোল্যান্ড মিশন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে৷’’
তিনি জানান, ‘‘ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড সীমান্ত পর্যন্ত বাংলাদেশিদেরকে নিজস্ব ব্যবস্থায় আসতে হবে। পোল্যান্ডে বেশ কয়েকটি জায়গায় তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ সেখান থেকে তাদেরকে বিশেষ বিমান পাঠিয়ে দেশে আনা যায় কিনা, সেটি আমরা আলোচনা করছি৷’’
সূত্র : ডয়চে ভেলে