পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার যত যুদ্ধ
ভ্লাদিমির পুতিনের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে প্রচণ্ড দারিদ্র্য ও বন্ধুদের উপহাস-তাচ্ছিল্যের মধ্যে। তবে সেই জীবনই তাকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়ার শক্তি দিয়েছে। ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন ইস্পাত-দৃঢ় ব্যক্তি হিসেবে। গোয়েন্দা থেকে হয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। দুই যুগ হতে চলল রাশিয়ার শাসনক্ষমতায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর রাশিয়া নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুতিনের নেতৃত্বে।
রাশিয়ার জন্মের পরের কথা-বরিস ইয়েলত্সিনের নেতৃত্বে ‘পোকায় খাওয়া’ ও রক্তসল্পতায় ভোগা রাশিয়ান ফেডারেশনের ছিল করুণ দশা। কিন্তু এবার দেশটির রাশ ধরেছেন ‘লৌহমানব’ ভ্লাদিমির পুতিন। দেখে নেওয়া যাক পুতিনের সামরিক নানা পদক্ষেপের খতিয়ান।
চেচনিয়া যুদ্ধ
১৯৯১ সালে পতন হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের। সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে জন্ম নেয় ‘রাশিয়ান ফেডারেশন’। আর সুযোগ বুঝে স্বাধীনতা ঘোষণা করে চেচেনরা। স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করে ‘চেচেন রিপাবলিক অফ ইচকেরিয়া’। কিন্তু ১৯৯৪ সালে ওই অঞ্চল ফিরে পেতে চেচেন বিদ্রোহীদের দমনে ফৌজ পাঠায় মস্কো। কিন্তু ভয়াবহ লড়াইয়ে পর ১৯৯৬ সালে পর্যুদস্ত হয়ে ফিরে আসে রুশ সেনা। ওই যুদ্ধই পরিচিতি পায় প্রথম ‘চেচেন ওয়ার’ হিসেবে। তারপর ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে আবারও চেচনিয়ায় সেনা পাঠায় রাশিয়া। তুমুল লড়াইয়ের পর ২০০০ সালে চেচেন রাজধানী গ্রজনিকে বোমা মেরে কার্যত ধুলোয় মিশিয়ে দেয় রুশ বাহিনী। দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধে জয় হয় মস্কোর। একইসঙ্গে রুশ রাজনীতিতে প্রবলভাবে প্রতিষ্ঠা পান পুতিন।
আরও পড়ুন: বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা, আহত অর্ধশতাধিক
রাশিয়া-জর্জিয়া যুদ্ধ
২০০৮ সালে জর্জিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বেধে যায় রাশিয়ার। দক্ষিণ ওসেটিয়া নিয়ে সংঘাত শুরু। অঞ্চলটির দখল ছিল রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। হারানো এলাকার দখল ফিরে পেতে সেই বছরের আগস্টে অভিযান শুরু করে জর্জিয়ার সেনারা। রুশপন্থী বিদ্রোহীরা সহায়তায় পাল্টা হামলা চালায় রাশিয়ার সেনাবাহিনী। কয়েক দিনের যুদ্ধে প্রাণ যায় কয়েক হাজারের মানুষের। পরাজয় হয় একসময়ের সোভিয়েত অন্তর্ভুক্ত দেশ জর্জিয়ার। সাউথ ওসেটিয়া ও আবাকাজি প্রদেশকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করে রাশিয়া। এর পর থেকেই সেখানে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে রাশিয়া। সামরিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা জানান, এ হামলার জন্য পার্লামেন্টকে রাজি করিয়েছিলেন পুতিন।
সিরিয়ায় রুশ সেনার অভিযান
২০১৫ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থনে ফৌজ পাঠায় রাশিয়া। ইসলামিক স্টেট ও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আসাদের ফৌজের হয়ে প্রবল বোমাবর্ষণ করে রুশ যুদ্ধবিমানগুলো। বলা যায়, মস্কোর মদতেই মুসলিম জঙ্গিদের শায়েস্তা করা এবং বিদ্রোহীদের ঘাঁটিগুলি দখল করতে সক্ষম হয় আসাদের বাহিনী। সেখানেও আমেরিকার প্রভাব খর্ব করতে রীতিমতো উঠেপড়ে চেষ্টা চালিয়েছিল রাশিয়া ও ইরান।
ক্রিমিয়া জবরদখল
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই ইউক্রেনে মস্কো বিরোধী হাওয়া প্রবল হয়ে ওঠে। আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের আরও কাছাকাছি চলে আসে কিয়েভ। জনতার রায়ে রাশ টানতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে দেশটির রুশপন্থী সরকার। কিন্তু ২০১৪ সালে ইউরোপপন্থী গণ-আন্দোলনের ফলে গদি ছাড়তে হয় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকভিচকে। জবাবে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে রাশিয়া। দ্বিখণ্ডিত হয় ইউক্রেন। তবে মস্কোর এহেন আগ্রাসনকে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক মঞ্চ।
আরও পড়ুন: ১৮ বছর বয়সে দুবাই জয় করলো বাংলাদেশি তরুণ আইমান
ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্ত সংঘাত
দীর্ঘ সংঘাতের পর সোমবার রুশপন্থী বিদ্রোহীদের দখলে থাকা ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলের ডোনেত্স্ক ও লুহানস্ককে 'স্বাধীন' রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয় রাশিয়া। ফলে ক্রিমিয়ার পর আবারও বিভক্ত হয় ইউক্রেন। এহেন চরম উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে জরুরি বৈঠকে বসেছে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা বৈঠক। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনে আলোচনা করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি। সবমিলিয়ে, সাবেক সোভিয়েত সদস্য দেশটিকে কোনোভাবেই ন্যাটো সামরিক গোষ্ঠীতে যোগ দিতে দেবে না রাশিয়া তা স্পষ্ট।