কথায় বলি ‘মান্ধাতার আমল’, মান্ধাতা আসলে কে ছিলেন?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:০৭ AM , আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:০৭ AM
'মান্ধাতার আমল' বাংলা ভাষায় লিখিত এবং মানুষের মুখে মুখে ফেরা শব্দগুলোর একটি। খুবই প্রাচীন বা পুরনো কিছু বোঝাতে এই শব্দের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই শব্দ শুনলে প্রথমেই প্রশ্ন মনে জাগে মান্ধাতা আসলে কে? আর উনার আমলে কী এমন বিশেষ হতো যার জন্য এটি এমন হাজার হাজার বছর ধরে চলছে? বাংলা একাডেমী অভিধান বলছে, মান্ধাতা শব্দের অর্থ সূর্য বংশীয় প্রাচীন নৃপতি বা রাজাবিশেষ। আর মান্ধাতার আমল অর্থ মান্ধাতার শাসনকাল অর্থাৎ অতি প্রাচীনকাল। মান্ধাতা এক পৌরাণিক চরিত্র।
ভাষাতত্ত্ববিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ শাহরিয়ার রহমান জানাচ্ছেন, মান্ধাতার আমল শব্দটি এসেছে সত্য যুগের রাজা মান্ধাতার জীবন থেকে। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী রাজা মান্ধাতা খুব দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, শৈশব না দেখা রাজা ১২দিনে যুবক হয়েছিলেন। অধ্যাপক রহমান বলেন, "এই দ্রুত বড় হওয়াতে দ্রুত পুরনো হয়ে যাওয়ার সঙ্গে মেলানো হয়েছে। এখানে মান্ধাতা দ্রুত বড় হয়ে গেছেন, বুড়ো হয়ে যান-মানে তিনি দ্রুত পুরনো হয়ে গেছেন, সেখান থেকে মান্ধাতার আমলকে পুরনো অর্থে বোঝানো হয়।" এর বাইরে আরেকটি ব্যাখ্যা প্রচলিত রয়েছে, যে রাজা মান্ধাতার সময়কাল ছিল সত্য যুগ।
সময়কাল হিসাব করলে দেখা যায়, রাজা মান্ধাতা প্রায় ৩৫ লাখ বছর আগে রাজকার্য পরিচালনা করেছেন। ফলে মান্ধাতার আমল মানে বহু বছর আগের কিছু। রাজা মান্ধাতার জন্মের ইতিহাসও খুব চমকপ্রদ। কৃত্তিবাসের 'রামায়ণ'-এ উল্লেখ আছে, মান্ধাতা হলেন সূর্য বংশের রাজা যুবনাশ্বের পুত্র। মাতৃগর্ভে নয়, পিতৃ-গর্ভে জন্মেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন- নির্ধারিত ২০০ নম্বরের চেয়ে বেশি পেয়েছেন অনেকে, তদন্ত কমিটি
এখন পিতৃ-গর্ভে জন্মানো শিশুর জন্য দুধ যখন পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন দেবরাজ ইন্দ্র তার মুখে নিজের তর্জনী দিয়ে বলেছিলেন, 'মামধাস্ততি'-সংস্কৃত এই শব্দের মানে 'আমাকে পান করো।' মাম এবং ধাতা-এই শব্দবন্ধের মিলনই পরে ফোনলজিক্যাল সূত্রে মান্ধাতা নামে উচ্চারণ করা হতে থাকে। এখান থেকেই রাজা মান্ধাতার নামকরণ হয়েছিল।
আর দেবরাজ ইন্দ্রের তর্জনী চুষে জীবনের প্রথম খাদ্য-পানীয়ের স্বাদ পাওয়ায় মান্ধাতার শারীরিক বৃদ্ধি হয়েছিল ঐশ্বরিক দ্রুততায়। এই কারণেই তিনি বৃদ্ধও হয়েছিলেন খুব দ্রুত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক খন্দকার খায়রুন্নাহার বলছিলেন, সংস্কৃত থেকে আসা অনেক শব্দই মূলত পৌরানিক কাহিনী বা সাহিত্যের মাধ্যমে বিবর্তন হয়ে মূল ভাষায় মিশে গেছে। বাংলা ভাষায় অনেক আগের কোন সময় বোঝাতে বিভিন্ন রাজা বা নবাবদের আমল অনেকেই বলে থাকেন। তবে পৌরাণিক কাহিনী হলেও মান্ধাতার আমলের চেয়ে পুরনো কোন আমল বাংলা ভাষায় খুঁজে পাওয়া যাবে না।
সূত্র: বিবিসি বাংলা