বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্কুল ‘ইন্সটিটিউট লি রোজি’

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্কুল ‘ইন্সটিটিউট লি রোজি’
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্কুল ‘ইন্সটিটিউট লি রোজি’  © সংগৃহীত

বর্তমানে ইউরোপ পুরোবিশ্বের শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এমন আগ্রহের কারণটাও অত্যন্ত পরিষ্কার; মানসম্মত শিক্ষা, উন্নত আবাসন ব্যবস্থা এবং সেই সাথে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর শত বছরের সুনাম সহজেই আকৃষ্ট করে যেকোনো শিক্ষার্থীকে। তেমনই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ইন্সটিটিউট লি রোজি’। সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত এই স্কুল টি দেশটির প্রাচীনতম বোর্ডিং স্কুল। ১৮৮০ সালে পল কার্নাল এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

জুডিথ ক্র্যান্টজের প্রিন্সেস ডেইজি (১৯৮০) এবং টিল উই মেট অ্যাগেইন (১৯৮৮) উপন্যাসগুলো যারা পড়েছে তাদেরকে ‘ইন্সটিটিউট লি রোজি’ কে নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। এছাড়াও ক্যারেন রবার্ডস এর বেশ কয়েকটি রোম্যান্স উপন্যাসেও উল্লেখ আছে বিশ্ববিখ্যাত এই স্কুল টির নাম।

আরও পড়ুন: কাফনের কাপড় পরে উপাচার্যের পদত্যাগ চাইলেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

বিশ্বের সর্বাধিক ব্যয়বহুল স্কুল এটি। এই স্কুলের বার্ষিক টিউশন ফি এতটাই বেশি যা বহন করা অনেক বিত্তবানের পক্ষেও অসম্ভব, বাংলাদেশের হিসেবে বছরে যার পরিমাণ প্রায় ৯৬ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা!

শুধুমাত্র এই স্কুলের টিউশন ফি এর জন্য এটি বিখ্যাত নয়। এই স্কুলের শিক্ষাপদ্ধতি থেকে শুরু করে ক্যাম্পাস, ভর্তি প্রক্রিয়াসহ সকল কার্যক্রমেই রয়েছে স্ব-তন্ত্র্য, যার ফলে লি রোজি যেমন স্বনামধন্য, তেমনই বেশ আলোচিতও বটে।

‘এ স্কুল ফর লাইফ’ আদর্শে উজ্জীবিত আলোচিত এই ‘ইন্সটিটিউট লি রোজি’ বিশ্বের সবেচেয়ে ব্যয়বহুল স্কুল। যে স্কুল টি কে বলা হয় ‘স্কুল অফ কিংস” অর্থাৎ রাজাদের স্কুল। এ নামের পিছনে যৌক্তিক কারন ও আছে। শুরু থেকেই স্কুলটির প্রায় সব শিক্ষার্থীই ছিল অভিজাত পরিবার থেকে আসা। এ স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে বিভিন্ন দেশের রাজপুত্র-রাজকন্যাদের নাম। ইরানের শাহ, মোনাকোর প্রিন্স রেইনার, বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় অ্যালবার্ট, করিম আগা খান,এডওয়ার্ড কেন্ট ডিউক, যুগোস্লাভিয়ার প্রিন্স আলেক্সান্ডার, বেলজিয়াম রাজা আলবার্ট দ্বিতীয়, গ্রীসের ক্রাউন প্রিন্সেস এবং তার বোন পিয়া গেটি, মিশরের রাজা দ্বিতীয় ফুয়াদ, আলেকজান্দ্রা ফন ফার্স্টেনবার্গ এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আরও পড়ুন: আপনি এতক্ষণ সরকারের বদনাম বলছেন ক্যান? ভিডিও ভাইরাল

লি রোজির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু থেকেই ছিল ভিন্ন। গতানুগতিক চাপ প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য বাধ্য করা হতো না। পড়াশোনার সাথে খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, শীতকালীন ক্যাম্পাসে তিন মাস শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন, পর্বতারোহন, হাইকিং, স্নোবোর্ডিং, আইস-হকি, কার্লিং, ব্যাডমিন্টন, ড্রয়িং, ওয়াটার স্কিইং, গলফ, হকি, রোয়িং, অশ্বচালনা, সাঁতার, বাস্কেটবল, ভলিবল, ফুটবলসহ বিভিন্ন কার্যক্রম লি রোজিকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করে তোলে।

লি রোজির ছাত্র-ছাত্রীদের বলা হয় রোজেন। রোজেনদের একজন হতে চাইলে অবশ্যই প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের শুরুতে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নজর রাখতে হবে। ওয়েবসাইট থেকে ভর্তি ফর্মে আবেদনের পর একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রত্যেক প্রার্থীকে তাদের ক্যাম্পাসে ডাকা হয়। ভর্তি হওয়ার প্রথম ধাপে পর লি রোজির শিক্ষার্থীদের ফরাসি ও ইংরেজী ভাষা শিখানো হয়। মাধ্যমিকে আরো একটি ভাষা যুক্ত করা হয়।

আরও পড়ুন: পাঁচ ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার পদের পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কাল

যদিও ৭০টি ভিন্ন জাতীয়তার শিক্ষার্থী লি রোজির ক্লাসরুমে শিক্ষাগ্রহণ করে, কিন্তু ভাষা শিখে উঠতে তাদের তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কেননা এখানকার প্রতি পাঁচজন শিক্ষার্থীর জন্য বিষয়ভিত্তিক একজন করে শিক্ষক থাকেন, যারা নিরলসভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের সময় দিয়ে থাকেন।

স্কুলটির শিক্ষা-কার্যক্রম এতটাই মানসম্মত যে, এখান থেকে ডিপ্লোমা শেষে শতকরা ৩০ ভাগ রোজেন আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে সেরা ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়।

বর্তমানে লি রোজির পৃথক তিনটি ক্যাম্পাস রয়েছে। প্রথম এবং মূল ক্যাম্পাসটি সুইজারল্যান্ডের রোলে শহরে। মূল ক্যাম্পাসের পাশেই রয়েছে লা কোম্বে। এটি ১৯৭৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মেয়েদের ক্যাম্পাস। আর তৃতীয় ক্যাম্পাসটি জিস্টাডে, শীতকালীন তিন মাসের জন্য। মূলত সুইজারল্যান্ডের রোলে শহরকেই লি রোজির শেকড় বলা যেতে পারে। তাই স্কুলটির গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনাও গড়ে উঠেছে এই শহরেই।


সর্বশেষ সংবাদ