মৃত্যুর সনদ নিয়ে মর্গে স্বজনরা, জীবিত রোগী বসে ওয়ার্ডে

ভারতের একটি হাসপাতালে জীবিত রোগীর স্বজনদেরকে মৃত্যু সনদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে
ভারতের একটি হাসপাতালে জীবিত রোগীর স্বজনদেরকে মৃত্যু সনদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে  © আনন্দবাজার

কোভিড হাসপাতাল থেকে মৃত্যু সনদের (ডেথ সার্টিফিকেট) প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছিল স্বজনদের হাতে। অথচ মর্গে গিয়ে মৃতদেহ আর পাওয়া যায় না! শেষে খুঁজে দেখা গেল, ‘মৃত’ রোগী দিব্যি খাড়া হয়ে ওয়ার্ডের শয্যায় বসে আছেন। এমনটাই ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীর কোভিড হাসপাতালে। নানা অব্যবস্থা থেকে শুরু করে ভর্তি করার দালাল চক্র — একের পর এক ঘটনায় বারবার সংবাদ শিরোনামে আসছে নদিয়ার ওই হাসপাতাল।

হাসপাতাল ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১২ মে ভর্তি হয়েছিলেন ধানতলার হিজুলির বছর ছাব্বিশের ওই যুবক। করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি প্রথমে রানাঘাট স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। লালা পরীক্ষায় সংক্রমণ ধরা পড়লে তাঁকে কোভিড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁর বাড়ির লোকের অভিযোগ, শুক্রবার সকালে কোভিড হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হয়, তিনি মারা গিয়েছেন।

এতে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। তরতাজা এক যুবকের মৃত্যু সংবাদে গোটা এলাকার মানুষ মূহ্যমান হয়ে পড়েন। হাসপাতাল থেকেই বলা হয়েছিল, বাড়ির লোক এসে যেন মৃতদেহ দেখে যান। পরিজনেরা কান্নাকাটি করতে-করতেই হাসপাতালে আসেন। তাঁদের ডেথ সার্টিফিকেটের প্রতিলিপি দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মৃতদেহ কোথায় রাখা আছে তা নিয়েই প্রথম ধন্দ তৈরি হয়। হাসপাতালের কর্মীরা জানান, মৃতদেহ মর্গে আছে।

কিন্তু মর্গের কর্মীরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও দেহ দেখাতে পারেননি। শেষে তাঁদেরই কেউ ওয়ার্ডে ঘুরে এসে খবর দেন, রোগী আদৌ মারা যাননি। তা শুনে ওয়ার্ডের পিছন দিকের জানলায় উঁকি দিয়ে যুবকের ভাই দেখেন, দাদা দিব্যি নিজের শয্যায় বসে আছেন!

স্বজনরা প্রথমে অবাক, তার পর আনন্দে আত্মহারা। তাঁরা আর দেরি করেননি। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে ঘরের ছেলে ঘরে নিয়ে গিয়েছেন। যুবকের ভাই বলেন, ‘যখন ডেথ সার্টিফিকেটই ধরিয়ে দিয়েছে, ওখানে রেখে আর কী করব!’ যুবক আপাতত ঠিকই আছেন বলে পরিবার সূত্রের খবর। ডেথ সার্টিফিকেটের হাসপাতালে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ওই হাসপাতালের সুপার প্রভাস রায় ফোন ধরেননি। কল্যাণী মহকুমাশাসক হীরক মণ্ডল বলেন, ‘কেন হাসপাতাল থেকে এ রকম বলা হল, আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’ নদিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘একই সময়ে একই নামে দু’জন রোগী ভর্তি হয়েছে। তাঁদের এক জন মারা গিয়েছেন, তাঁর নথিপত্র জমা পড়েনি। এক জনেরই কাগজপত্র দু’জনের নামে জমা নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই বিভ্রান্তির জন্য এই ঘটনা।’ খবর: আনন্দবাজার।