আইআইটি ছেড়ে বলিউড, সেই অভিনেত্রী এখন গুগল কর্মকর্তা

  © ফাইল ফটো

যখন কানপুর আইআইটিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ এসেছিল, তখন তিনি ছবিতে অভিনয় করতে শুরু করেন। আবার যখন বলিউডের নায়িকা হিসেবে জনপ্রিয়তা পেলেন, তখন অভিনয়-ই ছেড়ে দিলেন। বরাবর উল্টো স্রোতে পাড়ি দিতে চেয়েছেন ময়ূরী কঙ্গো।

রাজনীতিক ভালচন্দ্র এবং থিয়েটারকর্মী সুজাতা কঙ্গোর মেয়ে ময়ূরীর জন্ম ১৯৮২ সালের ১৫ অগস্ট। শৈশব কেটেছে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ শহরে। সেখানে সেন্ট ফ্রান্সিস দ্য সেল কলেজ এবং দেওগিরি কলেজ থেকে পড়াশোনা।

মঞ্চে মায়ের অভিনয় দেখেই অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে একটু একটু করে জায়গা পায় ময়ূরীর মনে। স্কুলে পড়তে পড়তেই প্রথম ছবিতে অভিনয়। ত্রয়োদশী ময়ূরীকে দেখা গিয়েছিল ‘নসীম’ ছবিতে। ময়ূরীর চরিত্রের নামই ছিল ‘নসীম’। সৈয়দ আখতার মির্জা পরিচালিত এই ছবি সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিল।

এর পরেও সে সময় অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে ছিল না তাঁর। বরং ভেবেছিলেন মন দিয়ে পড়াশোনাই করে যাবেন। কিন্তু ফেলতে পারলেন না মহেশ ভট্টের অনুরোধ। যুগল হংসরাজের বিপরীতে অভিনয় করলেন ‘পাপা কহতে হ্যায়’ ছবিতে। বক্স অফিসে এই ছবি সফল হয়নি। কিন্তু জনপ্রিয় হয়েছিল ছবির গান। দর্শকদের ভাল লেগেছিল ময়ূরীকেও। সবুজ চোখের মণি নিয়ে তিনি লুকের দিক দিয়ে ছিলেন সমসাময়িক নায়িকাদের থেকে অন্যরকম।

এরপর আইআইটি কানপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ময়ূরী। কিন্তু ময়ূরী সিদ্ধান্ত নেন তিনি অভিনেত্রী হবেন। পড়াশোনা এবং অভিনয় একসঙ্গে চালিয়ে নিয়ে যেতে কলাবিভাগে স্নাতক হতে ভর্তি হন কলেজে। কিন্তু প্রথম থেকেই অনিয়মিত ছিলেন কলেজে। কিন্তু ক্রমশ ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় কলেজ যাওয়া ছেড়ে দেন ময়ূরী।

‘বেতাবি’, ‘হোগি প্যায়ার কে জিত’, ‘বাদল’, ‘শিকারি’-সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেন ময়ূরী। তাঁর শেষ ছবি ‘কুরবান’ মুক্তি পেয়েছিল ২০০৯-এ।
সিনেমার পাশাপাশি কাজ করেছেন ছোট পর্দাতেও। ‘ক্যয়া হদসা ক্যয়া হকীকত’, ‘করিশ্মা’, ‘কুসুম’, ‘কিটি পার্টি’, ‘রঙ্গোলি’, ‘কহিঁ কিসি রোজ’-এর মতো জনপ্রিয় সিরিয়ালের অন্যতম মুখ ছিলেন ময়ূরী। তিনি অভিনয় করেছেন মঞ্চেও।

কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে অভিনয় থেকে সরিয়ে নিচ্ছিলেন। ২০০৯-এর পরে তাঁকে আর পর্দায় দেখা যায়নি। হঠাৎ করে অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে ময়ূরী বলেছিলেন, তাঁর মনে হয় বলিউডে অভিনেত্রী হিসেবে দশ বছর যথেষ্ট সময়।

দশ বছর পরে নতুন মুখ এসে সরিয়ে দেয় পুরনো অভিনেত্রীদের। সেই পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নিজের থেকেই ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে চলে যান তিনি।
২০০৩ সালের ডিসেম্বরে ময়ূরী বিয়ে করেন আমেরিকাবাসী অদিত্য ধিলোঁকে। বিবাহসূত্রে আমেরিকাতেই থাকতে শুরু করেন ময়ূরী। বিয়ের পরেও প্রথম দিকে বলিউডে এসে কিছু কিছু কাজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু ক্রমে বলিউডকে বিদায় জানান।

যে অভিনয়ের জন্য একদিন উচ্চশিক্ষায় ইতি টেনেছিলেন, অভিনয় ছেড়ে সেই লেখাপড়ার কাছে আবার ফিরে গেলেন ময়ূরী। নিউ ইয়র্কে মার্কেটিং অ্যান্ড ফিনান্সে এমবিএ কোর্স করলেন তিনি।

এরপর ময়ূরীর কর্পোরেট চাকুরে জীবন শুরু হয়। ‘ডিজিটাস’, ‘জেনিথ’, ‘পারফরমিকস’-সহ একাধিক বহুজাতিক সংস্থায় উচ্চপদস্থ কর্মী ছিলেন ময়ূরী। ছেলে কিয়ানের জন্মের পরে ভারতে ফিরে আসেন ময়ূরী। এখন তিনি গুরুগ্রামে থাকেন। তাঁর কর্পোরেট চাকুরের জীবন কিন্তু চলছেই। অতীতের অভিনেত্রী ময়ূরী এখন গুগল-এর পদস্থ কর্মী।

গুগল-এর ইন্ডাস্ট্রি-এজেন্সি পার্টনারশিপের প্রধান হিসেবে এখন কর্মরত ময়ূরী। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁর জীবনে নতুন ইনিংস খুব একটা সহজ ছিল না। কারণ ক্লায়েন্টরা ধরেই নিতেন অভিনেত্রী মানে তিনি সৌন্দর্য-সর্বস্ব। জীবনের কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েই আক্ষেপ নেই। ময়ূরী ফিরতে চান না অভিনয়েও। জীবন যে ভাবে এসেছে, নিজের শর্তেই তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন নব্বইয়ের দশকের প্রতিশ্রুতিমান এই নায়িকা।

সূত্র: আনন্দবাজার


সর্বশেষ সংবাদ